নড়াইলের কোটাকোল ইউনিয়নের ধলইতলা গ্রামের ধর্ষিতা কুমারিমাতার নবজাতক ১২ দিনেও উদ্ধার হয়নি।
এদিকে,৭ ডিসেম্বর নড়াইল আমলী আদালত, লোহাগড়া উপজেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মো.জাহিদুল আজাদ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনায় অভিযোগটি আমলে নিয়ে এক আদেশে ১১ ডিসেম্বর ওসিকে কারণ দর্শাতে বলা হয়।
নির্ধারিত দিনে লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সফিকুল ইসলাম যথারীতি আদালতে হাজির হয়ে তিনি ভুল তথ্য উপস্থাপনের চেষ্টা করেন বলে উপস্থিত আইনজীবীরা জানিয়েছেন। পাশাপাশি সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ভিডিও ফুটেজসহ অন্যান্য তথ্য প্রমাণাদি আইনজীবীদের মাধ্যমে আদালতে প্রদান করা হয়। উপস্থাপিত তথ্য প্রমাণাদি পর্যালোচনার জন্য আগামী ২০ডিসেম্বর শুনানীর দিন ধার্য করা হয়েছে।
গত ৬ ডিসেম্বর বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘নবজাতককে কেড়ে নিল পাষন্ডরা, নড়াইলে সন্তান ফিরে পেতে কুমারী মায়ের আকুতি’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি বিচারক মো.জাহিদুল আজাদের দৃষ্টিগোচর হলে ৭ ডিসেম্বর তিনি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।
জানা যায়, ২ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে উপজেলার ধলাইতলা গ্রামে জনৈক দিনমজুরের ১৯ বছরের কিশোরী কন্যা ধর্ষিতা নারী পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়ার একদিন পরেই নবজাতককে ছিনিয়ে নিয়ে গেলেও ভয়ে বিচার দাবিতে মামলা করতে পারেনি ভুক্তভোগী পরিবারটি। নবজাতকের পিতৃপরিচয় ধামাচাপা দিতে ধর্ষকের প্রভাবশালী স্বজন একই গ্রামের প্রভাবশালী মৃত আমান গাজীর ছেলে সোহাগ, স্থানীয় হাফিজুরসহ ৪/৫ জন নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে কুমারী মাতার কোল থেকে তার সদ্য প্রসবকৃত পুত্র সন্তানকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এর আগে গত প্রায় ৯ মাস আগে ওই নারীকে নিজ বাড়িতে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে পার্শ্ববর্তী কুমারডাঙ্গা গ্রামের মৃত মোস্তফা শেখের লম্পট ছেলে নয়ন শেখ (৩২) । এরপরও ওই ধর্ষক নয়ন শেখ ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক মেয়েটিকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে। এরই একপর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয় এবং গত ১ ডিসেম্বর তার পিত্রালয়ের কুড়ে ঘরে একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেয়। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, কুমারী মাতার কোল থেকে ছিনিয়ে নেয়া নবজাতকে দুর্বৃত্তরা গোপালগঞ্জের পলশি নিজাম কান্দি গ্রামের জনৈক ব্যক্তির কাছে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। কিন্তু কুমারী মাতা ও তার পরিবার এখনও জানেনা শিশুটি কোথায় আছে? প্রভাবশালীদের ভয়ে পুলিশ কিংবা হাসপাতালে যেতে সাহস পায়নি পরিবারটি।
ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় গ্রামে কয়েকদফা শালিশ বৈঠক করে ধর্ষকের পক্ষের লোকেরা। এদিকে এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও জাতীয়-স্থানীয় একাধিক দৈনিকে প্রকাশিত হয়। এছাড়া আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও লোহাগড়া থানা পুলিশ রহস্য জনক কারণে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো ধর্ষিতা কুমারী মাতা ও তার মাকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে থানায় ডেকে পুলিশের পছন্দসই জবানবন্দী নিয়ে ঘটনাটি মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
অপরদিকে, কুমারী মাতা তাঁর নবজাতক পুত্র সন্তানকে কেড়ে নেয়া ও ধর্ষণের ঘটনা স্বীকার করে একটি সাক্ষাতকার সাংবাদিকদের নিকট দিয়েছেন। ওই সাক্ষাতকারের ভিডিও আদালতে প্রদান করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সফিকুল ইসলাম বলেন,‘আদালতের নির্দেশনানুযায়ী তদন্ত চলছে। এর বেশী কিছু বলতে পারব না।’
কাজী মেসবাহউর রহমান/শিক্ষানবিশ আইনজীবী, জজ কোর্ট ,নড়াইল