দিনাজপুরে এসি ল্যান্ডের কক্ষে বসা নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে ক্ষমতা দেখিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জ্যেষ্ঠ এক আইনজীবীকে সাজা দেয়ার ঘটনায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, শুধু এই ক্ষেত্রে নয়, সকল ক্ষেত্রেই মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ক্ষমতার অপপ্রয়োগ হচ্ছে। ক্ষমতা দেয়া হয় সঠিক প্রয়োগের জন্য। কিন্তু তার অপপ্রয়োগের ব্যাপারে ঝোঁক বেশি দেখা যায়।
আজ বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের অবকাশকালীন বেঞ্চ এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
দিনাজপুরে এসি ল্যান্ডের কক্ষে বসা নিয়ে এক আইনজীবীকে সাজা দেয়ার ঘটনায় কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিরোদা রানী রায়সহ তিনজনকে তলব করে গত ১৭ ডিসেম্বর আদেশ দেন হাইকোর্ট। নির্দেশ মোতাবেক বিরোদা রানী রায় ও ভুক্তভুগি আইনজীবী নিরোদ বিহারী রায় এবং ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম সম্পাদক ড. বদরুল হাসান কচি আদালতে হাজির হন। পরে এ বিষয়ে শুনানি শেষে আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেন আদালত।
আইনজীবী নিরোদ বিহারী রায়ের পক্ষে ছিলেন সৈয়দ মহিদুল কবির ও কাজী হেলাল উদ্দিন। অন্যদিকে এসি ল্যান্ড বিরোদা রানী রায়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মামুন মাহবুব। এছাড়া ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম’র পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট কুমার দেবুল দে এবং অ্যাডভোকেট মুরাদ সারোয়ার ভূঁইয়া।
পরে আইনজীবী মামুন মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে আমরা মৌখিকভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছি। আদালত বলেছেন লিখিতভাবে ক্ষমা চাইতে। আগামীকাল আমরা তা লিখিতভাবে আদালতে দাখিল করবো। আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামীকাল দিন ঠিক করে দিয়েছেন।’
অন্যদিকে আইনজীবী কাজী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আইনজীবীদের মর্যাদার প্রশ্নে এ ঘটনাটি আমরা আদালতের নজরে আনি। আমি মনে করি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে একজন প্রাকটিশনার আইনজীবীদের সাজা দেয়া মোবাইল কোর্টের আইনের অপব্যবহার। এই ধরনের অপব্যবহার যারা করেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া উচিত।’
এছাড়া ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম’র পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট কুমার দেবুল দে এবং অ্যাডভোকেট মুরাদ সারোয়ার ভূঁইয়া।
প্রসঙ্গত, জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠের বরাত দিয়ে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মহিদুল কবির ও কাজী হেলাল উদ্দিন আদালতের নজরে আনলে স্বপ্রণোদিত হয়ে রোববার (১৭ ডিসেম্বর) এ আদেশ দেন হাইকোর্ট।
সম্প্রতি দিনাজপুরের বীরগঞ্জে এসি ল্যান্ডের কক্ষে বসা নিয়ে বাকবিতণ্ডার জের ধরে এক জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা দেন সহকারী কমিশনার বিরোদা রানী রায়।
গত ১২ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) একটি নামজারির মামলায় শুনানি করতে গেলে অ্যাডভোকেট নিরোদ বিহারী রায়কে ৫০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সাজা দেওয়ার সময় এসি ল্যান্ড তার বক্তব্যে, ‘আমি আমার ক্ষমতা দেখালাম, পারলে আপনি আপনার ক্ষমতা দেখান।’ এমন উক্তি করেছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওই আইনজীবী।
পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করে স্থানীয় আইনজীবী সমিতি। এ ঘটনায় বিরোদা রানী রায়কে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় বদলি করা হয়েছে। যদিও এখনও নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি তিনি।
সুপ্রিমকোর্ট প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম