নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে পূর্ণাঙ্গ গার্মেন্ট কারখানা চালু করা হয়েছে। এটি হচ্ছে দেশের কোনও কারাগারে স্থাপিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ গার্মেণ্ট কারখানা। সমাজসেবা অধিদফতর ও বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তায় ‘কারা গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি’ নামে এ গার্মেন্ট কারখানা নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে দুই শিফটে তিনশ’ বন্দি কাজ করার সুযোগ পাবেন বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ।
কারাগারের এই গার্মেন্ট কারখানার পরিচালনা পদ্ধতি সম্পর্কে জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ জানান, ৫৪টি বিদেশি মেশিন নিয়ে এই গার্মেন্টের যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে পর্যায়ক্রমে এখানে ৩০০ মেশিন স্থাপন করা হবে। এই কারখানায় কাটিং, প্রিন্টিং ও আয়রনসহ সব সেকশনই রয়েছে। কারখানার প্রতিটি মেশিনে একজন দক্ষ কারিগর ও একজন হেলপার হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া কাটিং, প্রিন্টিং, আয়রন ও মালামাল উঠানামার জন্যও লেবার প্রয়োজন হবে। সে হিসেবে প্রতি শিফটে ১৫০ জন করে বন্দি কাজ করা সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ দুই শিফটে এই কারখানায় ৩০০ বন্দি বা হাজতি কাজ করতে পারবেন।
তিনি বলেন, ‘কারগারে বন্দিদের কয়েকটি শ্রেণি রয়েছে। সেই অনুযায়ী যারা দীর্ঘমেয়াদী বন্দি, যেমন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি বা অন্য কোনও মামলায় র্দীঘদিন ধরে জেল হাজতে রয়েছে এমন হাজতি ও কয়েদিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া হবে। এছাড়াও তাদের প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া হবে।’
জেল সুপার বলেন, ‘সল্পমেয়াদী কারাবন্দিদেরও কাজের ট্রেনিং দেওয়া হবে। যাতে তারা জেলখানা থেকে বের হয়ে কর্মজীবনে ফিরে যেতে পারেন। এছাড়াও কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে পাওয়া লাভের ৫০ শতাংশ টাকা বন্দি কারিগররা পাবেন। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মতো জেলাখানায় পিসি (প্রিজনার ক্যাশ) নামে একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তাদের টাকা সেই অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যাবে। ইচ্ছে করলে বন্দিরা সেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে সরকারি খাবারের পাশপাশি জেলাখানায় বসে ভালো খাবারও খেতে পারবে। কিংবা সেখান থেকে সন্তানদের লেখাপড়া বা সংসার চালানোর জন্য টাকা পাঠাতে পারবে। আবার টাকা না তুলে জমাতেও পারবে। জেল থেকে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় এক সঙ্গে সেই টাকা নিয়ে যেতে পারবে এবং নতুন কর্মসংস্থানে ব্যয় করতে পারবে।’
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া জানান, ‘কারাগারের ভেতরে বন্দিরের আর্থ সামাজিক সক্ষমতা বাড়াতে কারাগার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিস নির্মাণ করা হয়েছে। এই গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করে বন্দি ও হাজতিরা টাকা আয় করে নিজের ও পরিবারের খরচ মেটাতে পারবে। এর ফলে তারা বন্দি জীবন শেষে কিছু অর্থ নিয়ে বাড়ি যেতে পারবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বন্দিদের উৎপাদিত পণ্য জেলা কারাগারের সামনে বিক্রয় কেন্দ্রে বিক্রি করা হবে। এছাড়া আড়ং এর সঙ্গেও একটি আলাপ আলোচনা চলছে। সমঝোতা হলে এই কারাগার্মেন্ট ও রিজিলিয়ান্সে উৎপাদিত পণ্য আড়ং এর বিভিন্ন শো রুমে পাওয়া যাবে। বাকি পণ্য বাংলাদেশ নিট ওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারাস অ্যান্ড এক্সপোটার অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য নেবে। এ ব্যাপারে তারা সবোর্চ্চ সহায়তা করবে বলে বিকেএমইএর পক্ষ থেকে জানিয়েছে।’
গতকাল বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) জামদানি উৎপাদন কেন্দ্র ‘রিজিলিয়ান্স’ এরও উদ্বোধন করা হয়। গার্মেন্ট কারখানার পাশাপাশি জেলাখানায় ১০টি জামদানি তাঁত শিল্প স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি তাঁতে দুইজন করে ২০ জন এবং তাদের সহকারী আরও ২০ জন কাজের সুযোগ পাবে। জামদানি কারখানায় দুই শিফটে মোট ৮০ জন বন্দি কাজ করতে পারবে। এছাড়া জেলখানার ভেতরে বিছানার চাদর তৈরি, চুমকি কাজ, ব্লক, বাটিক, মোমবাতি বানানো, টিসু বক্স বানানো, হ্যান্ডিক্রাফটের কাজ চলছে। সব মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে ৪৫০ জন বন্দি বা হাজতির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার শুভাষ ঘোষ জানান, কারামহাপরিদর্শক আইজি প্রিজন বিগ্রেডিয়ার জেনালের সৈয়দ ইফতেখান উদ্দিনের সার্বিক তত্বাবধায়নে এবং জেলা প্রশাসনের সহায়তায় গার্মেন্ট কারখানার ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে সব কাজ করেছে কারাবন্দিরা। গাজীপুর ও কাশিমপুর কারাগারেও গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। তবে নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্টস কারখানায় একটি পূনাঙ্গ গার্মেন্টস সেকশন তৈরি করা রয়েছে।
বিশেষ প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম