সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার আমলে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনে দায়িত্ব পালনকারী এক কর্মকর্তা (জেলা জজ) হোসনে আরা আকতারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শিগগিরই তাকে দুদকের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। দুয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তাকে দুদকে তলব করা হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এর আগে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ ডিসেম্বর অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ওই বিচারক ও তার স্বামী-সন্তানসহ চারজনের ২ কোটি ২৮ লাখ টাকার ব্যাংক হিসাব জব্দ (ফ্রিজ) করা হয়। এ ছাড়া ওই বিচারকের নামে দেশের কোন কোন ব্যাংকে হিসাব রয়েছে, ওই হিসাবে গত দুই বছরে কত টাকা লেনদেন হয়েছে, সেই তথ্য জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক।
জানা গেছে, জেলা জজ হোসনে আরা আকতার এর আগে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার আমলে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনে বিশেষ কর্মকর্তা (স্পেশাল অফিসার) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময় তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বিচারপতি সিনহা প্রধান বিচারপতি থাকাবস্থায় গত জুন মাসে তিনি নারায়ণগঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলার জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে নিয়োগ পান। এর পর গত ১০ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার পদত্যাগের পর পরই ১৫ নভেম্বর বিচারক হোসনে আরাকে সাতক্ষীরায় বদলি করা হয়। এর আগে প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের আমলেও বিচারক হোসনে আরা আকতার সুপ্রিমকোর্টের প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
দুদকের কাছে আসা অভিযোগে বলা হয়, বিচারক হোসনে আরা তার একাধিক ব্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকার লেনদেন করছেন। তিনি অবৈধ উপায়ে নেওয়া অর্থ তার হিসাবে রাখছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। অভিযোগটি পাওয়ার পর দুদক থেকে কমিশনের উপপরিচালক ফরিদুর রহমানকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রাপ্ত অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে তাকে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। কমিশনের নির্দেশে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা প্রাথমিক অনুসন্ধান কাজ শুরু করেছেন।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে ওই বিচারক, তার স্বামী ও দুই সন্তানসহ মোট চারজনের নামে অগ্রণী ব্যাংক প্রেসক্লাব শাখায় ২ কোটি ২৮ লাখ টাকার সাতটি স্থায়ী আমানতের সন্ধান মেলে। পরে ওই টাকা জব্দ করার জন্য দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গত ২০ ডিসেম্বর ওই টাকা জব্দ করার নির্দেশ দেন।
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের পর দুদকের আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেন, সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ওই বিচারকের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, নিয়োগবাণিজ্যসহ নানাভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। আইনজীবী আরও জানান, বিচারক হোসনে আরা, তার স্বামী ইমদাদুল দস্তগীর ও দুই সন্তানের নামে অগ্রণী ব্যাংক প্রেসক্লাব শাখায় সাতটি স্থায়ী আমানত রয়েছে। এগুলো জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, বিচারক হোসনে আরার বিরুদ্ধে আসা এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য এখন শিগগিরই তাকে দুদকে তলব করা হবে। দুয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তাকে তলব করা হতে পারে বলেও সূত্রটি জানায়। এসব অভিযোগের ব্যাপারে ওই বিচারকের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার মোবাইলে বারবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি (ফোন রিসিভ করেননি)।
(সূত্র- দৈনিক আমাদের সময়)