মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা নির্যাতন ও গণহত্যার হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা এক রোহিঙ্গা নারীকে বিয়ের পর রেজিস্ট্রেশন করার উদ্যোগ নেওয়ায় এক ব্যক্তিকে লাখ টাকা জরিমানা করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ৩০ দিনের মধ্যে এ টাকা আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা না দিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আজ সোমবার (০৮ জানুয়ারি) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন এবিএম হামিদুল মিসবাহ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করেন মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার চারগ্রামের বাবুল হোসেন। যার ছেলে শোয়াইব হোসেন জুয়েল রোহিঙ্গা নারী রাফিজাকে বিয়ে করেন। রিট আবেদনে বলা হয়, ২৫ অক্টোবর আইন মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশনা জারি করে।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশি ছেলেদের সঙ্গে মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা মেয়েদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয় হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং কতিপয় নিকাহ রেজিস্ট্রার অপতৎপরতায় লিপ্ত থাকায় ‘বিশেষ এলাকা’ (কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম জেলা) সমূহে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বর কনে উভয়ে বাংলাদেশি নাগরিক কিনা বিষয়টি সুনিশ্চিত হয়ে (জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে) এ কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল নিকাহ রেজিস্ট্রারদের নির্দেশনা প্রদান করা হলো। এ বিষয়ে গাফিলতি হলে দায়ী নিকাহ রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
রিটে এ নির্দেশনার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। কারণ নির্দেশনার কারণে বাবুল হোসেনের ছেলের বিয়ে রেজিস্ট্রশন করা যাচ্ছে না।
আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুসারে বিদেশিরা নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যেতে পারে না। এছাড়া আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে রোহিঙ্গাদের বিয়ে করা যাবে না। কিন্ত এখানে আবেদনকারীরা দুটি অপরাধ করেছেন।
‘ওই মেয়েকে নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে নিয়ে আসা হয়েছে। আবার বিয়ে রেজিষ্ট্রশন করতে হাইকোর্টে রিটও করেছে। এ কারণে রিট খারিজ করে দিয়ে আদালত তাদের এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন।’
এ টাকা ৩০ দিনের মধ্যে না দিলে ছেলের বাবা বাবুল হোসেনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত বছরের ৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৫ আগস্ট রাখাইন প্রদেশে জাতিগত নিধন শুরু হওয়ার পর পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। মানিকগঞ্জের চারিগ্রামের শোয়াইব হোসেন জুয়েল যাত্রাবাড়ীর একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন।
তিনি রাফিজা (১৮) নামের এক নারীকে গত সেপ্টেম্বর মাসে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাছে একটি মসজিদে বিয়ে করেন। বিয়ের ঘটনা জানাজানি হলেই বর জুয়েল ও নববধূ রাফিজা পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রাফিজার পরিবার মানিকগঞ্জের চারিগ্রামের এক ধর্মীয় নেতার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ওই সময়েই রাফিজাকে দেখে জুয়েল প্রেমে পড়ে যান। কিন্তু রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের বাইরে অবস্থানের বিষয়ে পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে কিছুদিন আগে রাফিজার পরিবারকে কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে ফিরে যেতে হয়।
এ সময় জুয়েল কক্সবাজারের এক শরণার্থী শিবির থেকে অন্য শরণার্থী শিবিরে রাফিজাকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ান এবং এক সময় পেয়েও যান তাকে। পাওয়ার পর মসজিদের ইমাম তাদের বিয়ে পড়ান।
সুপ্রিমকোর্ট প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম