২০১৭ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ৮৬ জন গুমের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এদের মধ্যে ৯ জনের লাশ মিলেছে; ৪৫ জনকে পরবর্তী সময়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ১৬ জনকে। এখনো পর্যন্ত বাকি ১৬ জনের কোনও খোঁজ মেলেনি। এ ছাড়া বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১৫৪ জন।
বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন ২০১৭-তে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আজ শুক্রবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
তথ্যানুসন্ধান, দেশের বিভিন্ন জেলার মানবাধিকারকর্মীদের পাঠানো প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় অধিকারের মাসিক মানবাধিকার প্রতিবেদন। ২০১৭ সালের প্রতি মাসে অধিকারের প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর সংক্ষিপ্তরূপ এই বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন ২০১৭।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুম মানবতাবিরোধী অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও ২০১৭ সালে তা অব্যাহতভাবে ঘটেছে।
ভুক্তভোগীদের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাই তাদের ধরে নিয়ে গেছে এবং এরপর থেকেই তারা গুম হয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে স্পষ্টতই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়ে অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যও পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রথমে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরবর্তী সময়ে আটক ব্যক্তিটিকে জনসম্মুখে হাজির করেছে অথবা কোনো থানায় নিয়ে হস্তান্তর করেছে কিংবা গুম হওয়া ব্যক্তিটির লাশ পাওয়া গেছে।
অধিকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ১৫৪ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। নিহত ১৫৪ জনের মধ্যে দুই জন বিএনপির নেতা,এক জন শিবির কর্মী,একজন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নানিয়ারচর শাখার সাধারণ সম্পাদক, একজন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য, একজন নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির (মৃণাল বাহিনী) সদস্য, একজন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য, দুই জন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (লাল পতাকা) সদস্য, একজন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল জনযুদ্ধ) সদস্য, একজন সর্বহারা পার্টির সদস্য, পাঁচ জন জেএমবির সদস্য,একজন হরকাতুল জিহাদ-আল-ইসলামীর সদস্য, একজন গরু ব্যবসায়ী, একজন গ্রামবাসী,দুই জন ব্যবসায়ী,একজন কাঠমিস্ত্রি,একজন কৃষক,একজন ড্রাইভার,একজন চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী, দুই জন বিভিন্ন মামলার আসামি, একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি, ১১৯ জন কথিত অপরাধী। নিহত সাত জনের পরিচয় জানা যায়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ার’ হিসেবে প্রকাশ করেছে এবং দায়মুক্তি ভোগ করেছে।
অধিকারের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত বছর আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ৬৬ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। এ সময় ক্ষমতাসীন দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ঘটনা ঘটেছে ৩১৪টি। আর তাতে আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৩২৭ জন।
অধিকার গত বছর বিএনপির ২২টি অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ঘটনা রেকর্ড করে। এসব ঘটনায় কেউ নিহত না হলেও ২২৫ জন আহত হন।