যদি ২০১৫ সালে কাসুরে যখন সিরিয়াল কিলারের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা দায়ের করা হয়েছিল তখন পদক্ষেপ নিলে ছয় বছরের জয়নাবের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড এড়ানো যেত বলে এক পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে পাকিস্তানের লাহোরের হাইকোর্ট।
আজ সোমবার (১৫ জানুয়ারি) জয়নাব হত্যা মামলার শুনানির সময় দুই সদস্যের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন এ খবর জানিয়েছে।
সোমবার পাঞ্জাবের ফরেনসিক সায়েন্স এজেন্সির মহাপরিচালক জয়নাব হত্যা মামলায় আদালতে ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই প্রতিবেদনে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, জয়নাবের ধর্ষক ও খুনি এর আগেও একই ধরনের বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল।
এ বিষয়ে আদালত মহাপরিচালকের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ২০১৫ সালে এই বিষয়ে প্রথম মামলা দায়ের করা হয়। ওই সময় একটি যৌথ তদন্ত দল গঠন করা হয়েছিল এবং ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছিল। গত বছর নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে একজন সিরিয়াল কিলার রয়েছে।
লাহোর হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মনসুর আলি শাহ এ সময় মহাপরিচালককে বলেন, আপনাদের তদন্ত ২০১৫ সালে শুরু হওয়া উচিত ছিল।
এ সময় আদালতকে জানানো হয়, তদন্তের ভিত্তিতে প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে। তখন আবার প্রধান বিচারপতি বলেন, ওই সময় যদি আপনারা পদক্ষেপ নিতেন তাহলে হয়ত জয়নাবে ঘটনাটি এড়ানো যেত।
শুনানিতে উপস্থিত অ্যাডিশনার অ্যাডভোকেট জেনারেল আদালতকে জানান, কাসুরের দায়রা আদালতে ১০৮টি অমীমাংসিত ধর্ষণের মামলা রয়েছে। সর্বশেষ আটটি ঘটনা এখনও শনাক্ত করা হয়নি।
জয়নাবের সম্পূর্ন মেডিক্যাল রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দিয়ে প্রধান বিচারপতি তখন বলেন, প্রতিদিন এসব মামলার শুনানি হওয়া উচিত।
হাইকোর্টের ৩৬ ঘণ্টার আলটিমেটামের কারণে সোমবারের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আদালত খুনিকে গ্রেফতারে এই সময় বেধে দিয়েছিল। তবে আদালতকে শুনানিতে জানানো হয়, বড় ধরনের কোনও অগ্রগতি ঘটেনি।
মঙ্গলবার জয়নাব হত্যা মামলার বিষয়ে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, ৪ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) কোরআন ক্লাসে শেষে বাসায় ফেরার পথে পাঞ্জাবের কাসুর শহর থেকে ছয় বছরের শিশু জয়নাবকে অপহরণ করা হয়। ওই সময় বাবা-মা ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে থাকায় খালার কাছে ছিল সে। পরে ৯ জানুয়ারি এক পুলিশ সদস্য শাহবাজ খান রোডে আবর্জনার স্তূপ থেকে জয়নাবের মরদেহ উদ্ধার করেন। ময়না তদন্তে দেখা গেছে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে তাকে। এক বছরের মধ্যে কাসুরে আরও ১১টি শিশু ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে জয়নাবসহ আটটি হত্যায় এক ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া গেছে। ফলে জয়নাবের হত্যাকারীকে ‘সিরিয়াল কিলার ও রেপিস্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এ ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে কাসুর শহরসহ গোটা পাকিস্তান।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম