বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-এর বাধার কারণে আটকে আছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন। তবে বিএমএ’র নেতারা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা বলেন, দেশের বিদ্যমান বিভিন্ন আইনেই রোগীদের সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু চিকিৎসকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় কোনও আইন নেই।
এদিকে, এসব সমস্যা সমাধান করে দ্রুত যাতে আইনটি সংসদে উত্থাপন করতে কমিটি করে দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা চার বছর আগে আইনটির খসড়া প্রস্তুত করি। কিন্তু চিকিৎসকদের বাধার মুখে এই আইন আলোর মুখ দেখছে না। চিকিৎসকরা আগে নিজেদের সুরক্ষায় আলাদা আইন করার দাবি জানিয়েছেন। তারা রোগী বা দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য পৃথক আইনের বিপক্ষে। তাই এই আইন বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইনে চিকিৎসক বা রোগীর পক্ষে-বিপক্ষে কিছু নেই। অনেকে খসড়া না পড়েই বিরোধিতা করছেন। তারা একটি খসড়া দিয়েছেন, যা কোনও আইন হতে পারে না। তবে তাদের প্রস্তাবের কিছু কিছু বিষয় গ্রহণ করা যেতে পারে।’
জানা গেছে, ২০১৪ সালে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনের একটি খসড়া তৈরি করা হয়। ২০১৬ সালে চিকিৎসকদের বাধার মুখে খসড়ায় কিছু বিষয় সংযোজন-বিয়োজন করে ‘রোগী এবং স্বাস্থ্যসেবাদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন- ২০১৬’ নামকরণ করা হয়। খসড়ায় চিকিৎসক, রোগী, রোগীর স্বজনদের আচরণ ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা এবং রোগীর স্বজনদের বিরুদ্ধে হাসপাতাল ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। ফলে আইনটি দ্রুত পাস করার বিষয়টি সামনে আসে। কিন্তু চিকিৎসকদের বাধার মুখে ২০১৭ সালেও আইনটি করা সম্ভব হয়নি। সংসদের বর্তমান অধিবেশনে আইনটি উত্থাপন করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ১৬ জানুয়ারি আইনটি সংসদে পাঠাতে কমিটি করে দিয়েছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) মো. হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আইনটি সংসদে তোলার মতো এখনও উপযুক্ত হয়নি। খসড়াটি চূড়ান্ত করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইনটি নিয়ে তেমন কোনও জটিলতা নেই। তবে চিকিৎসকরা পৃথকভাবে ‘চিকিৎসক ও চিকিৎসক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান (হাসপাতাল, ক্লিনিক, মেডিক্যাল কলেজ ইত্যাদি) সুরক্ষা আইন’ চাচ্ছেন। আর আমরা একই আইনে রোগী, চিকিৎসক ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আসতে চাই।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, রোগীর প্রতি অবহেলা বা চিকিৎসায় ভুল হলে চিকিৎসক বা সেবাদানকারীদের কাউকেই প্রথমে গ্রেফতার করা যাবে না। পুলিশ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিলেই গ্রেফতার করা যাবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও এ আইন লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। আর কোনও ব্যক্তি স্বাস্থ্যসেবাদানকারীর প্রতি সহিংস আচরণ করলে, প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করলে তা জামিন অযোগ্য অপরাধ হবে বলে গণ্য হবে। তবে অবহেলার বিষয়টি প্রমাণিত হলে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তারপরও চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ওই খসড়ার বিরোধিতা করছে।’
এ বিষয়ে বিএমএ‘র সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা কেন বিরোধিতা করবো? আমরা কী বললাম না বললাম তাতে কিছু যায় আসে না। সংসদে আইন পাস করবে সরকার। আমরা বললেই কি সরকার আইন পাস করা থেকে বিরত থাকবে? এ আইনে আমাদের কোনও সমস্যা নেই।’
তবে শুধু চিকিৎসকদের জন্য কেন সুরক্ষার আইন চান? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন আইন দিয়ে রোগীদের সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব। সেখানে রোগীদের সুরক্ষায় আলাদা করে আইনের প্রয়োজন নেই। তবে আমরা সুরক্ষা আইনের যে খসড়া দিয়েছি সেটা মন্ত্রণালয় বিবেচনায় নিতে পারে। কিন্তু কয়েকজন আমলা বিষয়টি নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করছেন।’
স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নে বিএমএ’র বাধার বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিএমএ’র নেতিবাচক ভূমিকার কারণে আইনটি পাস করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের বিরোধিতার কারণ আমার জানা নেই। অনেকে খসড়া না পড়েই বিরোধিতা করছেন। তারা মূলত ১৯৮২ সালের স্বাস্থ্যসেবা অধ্যাদেশ অনুযায়ী পৃথক আইন চান। তবে দেশের সব চিকিৎসকরা এই খসড়ার বিরোধিতা করছেন না। অনেকেই রোগীর সুরক্ষা চান।’ বাংলা ট্রিবিউন
সম্পাদনা- ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম