বাংলাদেশে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি বলছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলাকে ইচ্ছে করেই নির্বাচনের বছরে এসে বেগবান করা হয়েছে।
অন্য দিকে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিএনপি বরং উল্টো মামলাটিকে ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে।
সব মিলিয়ে গত কদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে সরকারি ও বিরোধী দলের নেতাদের কাছ থেকে পাল্টাপাল্টি মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। সরকারি দল বনাম বিএনপির মধ্যে চলছে হুমকি পাল্টা হুমকি।
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মামলার রায়ের দিন ধার্য হওয়ার পর থেকে। রায় বিপক্ষে গেলে খালেদা জিয়া আদৌ নির্বাচন করতে পারবেন কি না সেনিয়েও চলছে জল্পনা-কল্পনা।
কিন্তু এই রায়ের দিন এখন ধার্য করার মধ্যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি।
দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলছেন মামলাটির কার্যক্রম ইচ্ছে করেই নির্বাচনের বছরে এসে বেগবান করা করা হয়েছে।
তিনি বলছেন, “উদ্বেগের কারণ হল, মামলাটি অস্বাভাবিক গতিতে অগ্রসর হচ্ছে।”
“আর যেভাবে সরকারের মন্ত্রীরা সাজাটাজার কথা বলছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে যে আগামী একাদশ জাতিয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই ধরনের কর্মকাণ্ড চলছে যাতে খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে আগামী নির্বাচনের বাইরে রেখে তারা ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির মতো আরেকটা নাটক বা প্রহসন করতে পারে।”
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায় ঘোষণা করার কথা রয়েছে আগামী ৮ই ফেব্রুয়ারি। গত সপ্তাহে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই দুর্নীতি মামলাটির বিচারকার্য শেষ করে রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছে।
এর পরপরই রায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গেলে আন্দোলনের হুমকি এসেছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে।
অন্য দিকে মামলার রায়কে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিএনপি বরং উল্টো মামলাটিকে ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে, যেমনটা বলছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ।
তার কথায়, “বিএনপি খুব পূর্বপরিকল্পিত ভাবেই এই মামলাকে নিয়ে মানুষের মধ্যে শঙ্কা তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলার চেষ্টা করছে। তবে আমরা খুব পরিষ্কারভাবেই জানিয়ে দিতে চাই যে আদালতের বিচারাধীন বিষয় নিয়ে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই।”
তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো রায় প্রকাশের আগেই কেন সে নিয়ে কথা বলা হচ্ছে? এমনকি মন্ত্রীদের কাছ থেকেও বক্তব্য এসেছে।
জবাবে তিনি বলেন, “আমি মন্ত্রী নই। আমি দলের কথা বলছি। দলের পক্ষ থেকে আমরা এই রায় নিয়ে কোন মন্তব্য করিনি।”
বাংলাদেশে এ বছর রাজনীতিতে সকল ইস্যুই হবে নির্বাচন সম্পর্কিত, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। রাজনীতির বিশ্লেষকরা মনে করছেন গত নির্বাচনে না যাওয়ার ভুল বুঝতে পেরে এবার নির্বাচনে যাওয়ার সকল চেষ্টাই করবে বিএনপি।
কিন্তু একই সাথে আওয়ামী লীগের উপরেও চাপ রয়েছে সব দলকে নিয়ে নির্বাচন করার। যাতে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন পরবর্তী একই ধরনের সমালোচনার মুখে তাদের যেনও পড়তে না হয়।
সিনিয়র সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবির মনে করছেন, এই রায়কে ঘিরে রাজনীতির উত্তাপ রাজপথে চলে আসতে পারে।
তিনি বলছেন, “বিএনপির জন্য এটা একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন যদি মামলার রায় বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যায়, অর্থাৎ তার যদি জেল হয় তাহলে কি হবে?”
“তাহলে বিএনপি এমন একটা অবস্থার মধ্যে পড়বে যেখান থেকে তাকে উদ্ধার পেতে হবে এবং উদ্ধার পেতে হলে তাকে সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করতে হবে। এখন সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে বাকযুদ্ধের মাধ্যমে রাজনীতিতে এই যে উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে সেই উত্তাপ শেষ পর্যন্ত গিয়ে রাস্তায় গিয়েই পড়তে পারে”, বলছেন মি কবির।
এই রায়কে ঘিরে বাংলাদেশের পরিবেশ আরো উত্তপ্ত হওয়ার আশংকা করছেন রাজনীতির এই বিশ্লেষক।
অন্য দিকে বিএনপি বলছে তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সবমিলিয়ে ২৪টি মামলা রয়েছে। এসব মামলাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে।