ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম

বড় সংকটের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে

সংবিধানে বিচার বিভাগের ওপর যে বিষয়গুলো লেখা আছে, সেগুলো নজরে আসছে না বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। ফলে এটা একটা বড় রকমের সংকটে পরিণত হবে এবং যার লক্ষ্মণগুলো দেখা যাচ্ছে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, সংবিধানে বিচার বিভাগের ওপর যে বিষয়গুলো লেখা আছে, সেগুলো নজরে আসছে না। এর ফল আমরা পাচ্ছি। পেতে থাকব। কোনো একটা সময় আসবে, যখন এটা আমাদের একটা বড় রকমের সংকটে পরিণত হবে, যার পূর্ব সিনড্রমগুলো (লক্ষণগুলো) আমরা দেখতে পাচ্ছি। সংবিধান ভায়োলেট করে, সংবিধান না মেনে আমরা বিচারপতি কী করে নিয়োগ করি?

‘মনজিল মোরসেদ পরিচালিত জনস্বার্থ মামলার রায়’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে গতকাল রোববার (২৮ জানুয়ারি) ব্যারিস্টার আমীর এসব কথা বলেন।

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, ‘পার্লামেন্ট তো অনেক আইন করতে চায়। বলতে চায়, কীভাবে বিচারপতি বিদায় করা যাবে, সেই আইন করব। কিন্তু বিচারপতি কীভাবে নিয়োগ করা যাবে, সে আইন করার যে নির্দেশ দেওয়া আছে সংবিধানে, সে আইন পাস করা হয় না কেন? বিচারপতি নিয়োগে সংবিধান অনুযায়ী যে আইন প্রণয়ন করার কথা, সেটা প্রণয়ন না হওয়ায় বর্তমানে যে অবস্থা রয়েছে, তাতে আমরা অ্যাডহক অবস্থায় বিচারপতি নিয়োগ করছি। এটা অনেকটা আন্দাজে ঢিল ছোড়ার মতো। একজন নামকরা জুরিস্টও বলেছিলেন, আমরা যখন বিচারপতি নিয়োগ করি, তখন আন্দাজে ঢিল ছুড়ি। বিচারপতি নিয়োগে আইন তৈরির বিষয়ে জনমত সৃষ্টির আহ্বান জানান তিনি।

ব্যারিস্টার এম আমীর আরও বলেন, সংবিধানে হাইকোর্ট বিভাগ বলে একটি বিভাগ ছিল। এখন তো হাইকোর্ট বিভাগ বলে আলাদা কোনো বিভাগ খুঁজে পায় না। বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ হাইকোর্ট বিভাগের থাকার কথা। আমি কখনই মেলাতে পারি না যে, হাইকোর্ট ইক্যুয়াল টু সুপ্রিমকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট ইক্যুয়াল টু হাইকোর্ট, নর চিফ জাস্টিস ইক্যুয়াল টু সুপ্রিমকোর্ট। এই অ্যালজেব্রাগুলো মেলাতে পারি না। সে জন্য আমার মনে প্রচ- কষ্ট বহন করে চলেছি। আমাদের সংবিধানের যে চ্যাপ্টার আমরা লিখেছিলাম, এতে আমাদের যে স্বপ্ন ছিল, সেই স্বপ্ন পূরণ আজও করতে পারিনি। সে জন্য আশা করি এ বিষয় নিয়ে সবাই আলাপ-আলোচনা করবে।

ব্যারিস্টার আমীর বলেন, আজ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে মানবতার স্খলন। মানবতার যে স্খলন ঘটেছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দরকার পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটি। শান্তির বড় অভাব। যে সংগঠন মনজিল মোরসেদ করেছে, তার জন্য তাকে আরও প্রো-অ্যাকটিভ ভূমিকা রাখতে হবে এই পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির ক্ষেত্রে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি তাফাজ্জুল ইসলাম, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সিনিয়র আইনজীবী এবিএম নুরুল ইসলাম, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ প্রমুখ। এ ছাড়াও হাইকোর্ট বিভাগের বেশ কয়েকজন বিচারপতি ও আইনজীবী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সুপ্রিমকোর্ট প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম