তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের বহুল আলোচিত ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করে বিকল্প হিসেবে ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-২০১৮’ তৈরি করছে সরকার।
আজ সোমবার (২৯ জানুয়ারি) আইনটির খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদনের বিষয়টি মন্ত্রিসভায় উঠছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নিয়মিত বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-২০১৮
‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের’ মাধ্যমে বিতর্কিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারা বিলুপ্তি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন এ আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত করেছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। খসড়া আইনটির চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হচ্ছে। বিষয়টি মন্ত্রিসভার নিয়মিত কার্যপত্রের তিন নম্বর ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। খসড়ায় আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করার কথা বলা হলেও এ ধারার অপরাধগুলো ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের চারটি ধারায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ধারাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, যে ধরনের ঘটনায় ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ চলছিল, সেগুলোকে ছাড় দেওয়া হয়নি। ক্ষেত্রবিশেষে শাস্তি কিছুটা কমানো হয়েছে। অপরাধের গুরুত্ব ও দণ্ডের মাত্রার ভিত্তিতে কয়েকটি ধারার অপরাধকে অজামিনযোগ্যও করা হচ্ছে।
২০১৬ সালের ২২ জুলাই মন্ত্রিসভা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়াটি নীতিগতভাবে অনুমোদন করে। খসড়ায় জাতির পিতা, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা, প্রচারণা এসবে মদদ দেওয়ার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছিল। তবে খসড়া আইনে অপরাধের শাস্তি কমিয়ে অনধিক ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণসংক্রান্ত বিষয়গুলো একাধিক ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। চূড়ান্ত খসড়ায় একটিমাত্র ধারায় এগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
দেখা গেছে, আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধগুলো ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কয়েকটি ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের চারটি ধারা ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১ এ সংক্রান্ত অপরাধ ও শাস্তিগুলো বিন্যস্ত করা হয়েছে।
২৫ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শনমূলক তথ্য প্রেরণ করেন, ব্যক্তিকে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ করতে পারে এমন তথ্য প্রকাশ করেন, মিথ্যা জানা থাকার পর কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য তথ্য প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, তা হলে এটি অপরাধ হবে। প্রথম দফায় এ অপরাধের শাস্তি হবে তিন বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দান। এসব অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করলে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
ধারা ২৮-এ বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধে আঘাত করার জন্য ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ করে, তা হলে সাত বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড, ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড একসঙ্গে দেওয়া হবে।
২৯ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইটে পেনাল কোডের সেকশন ৪৯৯-এ বর্ণিত অপরাধ করেন, তা হলে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। পেনাল কোডের সেকশন ৪৯৯-এ মানহানির কথা বলা হয়েছে। এ অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
৩১ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় তা হলে তা অপরাধ হবে। এ অপরাধের জন্য সাত বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। দ্বিতীয়বার বা বারবার এ অপরাধ করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। খসড়া আইনে এ ধারাটিকে অজামিনযোগ্য করা হয়েছে।
অপরাধের গুরুত্ব ও দণ্ডের মাত্রার ভিত্তিতে ১৭, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪-এই ১৫টি ধারার অপরাধকে অজামিনযোগ্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, আইনটি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ধারা ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭, ও ৬৬ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
নিজস্ব প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম