গণপরিবহন, পার্ক, সরকারি-বেসরকারি অফিস, গ্রন্থাগার, রেস্তোরাঁ, শপিং মল, পাবলিক টয়লেটসহ বিভিন্ন জনসমাগমস্থলে ধূমপান বন্ধে ২০০৫ সালে প্রণয়ন করা হয়েছিল একটি আইন। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার রোধে করা সেই আইনে প্রকাশ্যে ধূমপানের জরিমানা ধরা হয়েছিল ৫০ টাকা। পরে ২০১৩ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের সংশোধনী আনা হয়। সেই সংশোধনীতে জনসমাগমস্থলে ধূমপানের সাজার অর্থ ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা হয়। কিন্তু আইন না জানা ও ভাঙায় অভ্যস্ত লোকজনের অবস্থা তাতে বদলায়নি এতটুকু। দিনে দিনে সারাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই প্রকাশ্যে জনসমাগমস্থলে ধূমপান স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আইন অনুযায়ী, জনপরিসরে বা উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধ। কেউ এমন স্থানে ধূমপান করলে অনধিক ৩০০ টাকা জরিমানা করার বিধান আছে। একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে তিনি দ্বিগুণ হারে দণ্ডিত হবেন। আইনে সিগারেটের দোকান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ২০ গজ দূরে থাকতে হবে বলে বলা হয়েছে। তবে এই আইন না মানার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫–এর ২(চ) ধারা অনুসারে পাবলিক প্লেস বলতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস; গ্রন্থাগার, লিফট, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, আদালত, বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, নৌবন্দর, রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনাল, প্রেক্ষাগৃহ, প্রদর্শনী কেন্দ্র, থিয়েটার হল, বিপণিবিতান, রেস্টুরেন্ট, পাবলিক টয়লেট, শিশুপার্ক, মেলা বা পাবলিক পরিবহনে আরোহণের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষার জন্য নির্দিষ্ট সারি, জনসাধারণের সম্মিলিত ব্যবহারের স্থান বোঝায়।
শুরুর দিকে সেই আইন বাস্তয়ায়ন করতে পুলিশ কিছু অভিযানও চালিয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পর আইন অমান্য করে খোদ পুলিশের বহু সদস্যই প্রকাশ্যে ধূমপান করেন। এর সুযোগ নেয় জনগণও। এভাবে পুলিশ-জনতার দায়িত্বহীনতায় কেতাবি বিষয়ে পরিণত হয় ধূমপান নিয়ন্ত্রণ আইন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘যদি কোনো পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালনের সময় পাবলিক প্লেসে ধূমপান করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তা নীতি এবং আইন বর্হিভূত। আমরা সব সময়ই চেষ্টা করি যাতে পুলিশ সদস্যরা সব ধরনের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে, সে জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করতে।’
বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী চার কোটি ১৩ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে তামাক সেবন করছে। তারা পরোক্ষভাবে ক্ষতি করছে প্রায় এক কোটি ১৫ লাখ মানুষের। ধূমপান না করেও কেউ যেন পরোক্ষভাবে এর কুফলের শিকার না হন, এ লক্ষ্যে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়। আইনে খোলা জায়গা—পার্ক, মাঠ, বাস টার্মিনাল, স্টেশন, লঞ্চঘাট, রেস্তোরাঁ, খাওয়ার জায়গা—যেখানে মানুষ জড়ো হয়, সেখানে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মূলত ধূমপান আইন মেনে না চলার প্রবণতা, জরিমানার পরিমাণ কম হওয়া এবং তামাক উত্পাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাপটের কারণে আইন প্রয়োগে হিমশিম খাচ্ছে সরকার।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস স্টপেজ ও বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ধূমপান করতে দেখা যায়। কিন্তু সে বিষয়ে জনসচেতনতার কোনো উদ্যোগ নেই।
তবে পাবলিক প্লেসে ধূমপানের বিরুদ্ধে প্রায়ই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে জানান ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিট্রেট মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘পাবলিক প্লেসে ধূমপানের বিরুদ্ধে অনেক সময়ই মোবাইল কোর্ট চালানো হয়। ঢাকা মহানগরীতে অন্য কোনো মোবাইল কোর্ট চালানোর সময়ও ধূমপানের বিষয়ে লক্ষ্য রাখা হয়। আর পাবলিক প্লেসে ধূমপানে শাস্তি আগের থেকে বাড়ানো হয়েছে।’
তাহলে কী কারণে পাবলিক প্লেসে ধূমপান কমানো যাচ্ছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে মশিউর রহমান বলেন, ‘আগের থেকে মানুষের মধ্যে সচেতনতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বাসে এখন আর কাউকে ধূমপান করতে দেখা যায় না। তবে বাইরে এখনো আইনটি মানা হয় না। শুধু আইন প্রয়োগ করে হবে না, মানুষকেও সচেতন হতে হবে।’
সম্পাদনা- ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম