ফৌজদারি মামলায় পুলিশ হেফাজতে থাকা ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজাহানকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ওই ঘটনায় ইউএনও-ওসিসহ চারজন নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার পর আজ সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চে তাদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে এ আদেশ দেন।
চারজন হলেন- লোহাগাড়ার ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম, ওসি মো. শাহজাহান, এসআই হেলাল খান ও ওয়াসিম।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে তলবকৃতদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফারজানা শারমিন ও আইনজীবী মোকবুল আহমেদ।
পরে মনজিল মোরসেদ বলেন, তারা ঘটনা স্বীকার করে নিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। এরপর শুনানি শেষে আদালত ভবিষ্যতে ম্যাজিস্ট্রেটকে মোবাইল কোর্ট বসানোর সময় সতর্ক থাকতে বলেছেন। আর লোহাগাড়ার ওসিকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছেন।
‘আপাতত চারজনকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। তবে রুল শুনানি চলবে। এরপর হবে মামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’
এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে লোহাগাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম, ওসি মো. শাহজাহান, এসআই হেলাল খান ও ওয়াসিমকে তলব করেন হাইকোর্ট।
সাজানো ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়া হয়েছে—এমন দাবি করে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে মোহাম্মদ বেলাল উদ্দীন ওই রিটটি করেন। এই বেলালকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়া হয়েছিল।
জানা গেছে, গত ১৩ অক্টোবর রাত নয়টায় বেলালকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন একটি ফৌজদারি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। পুলিশের এক জব্দ তালিকায় দেখা যায় ১৩ অক্টোবর রাত নয়টায় তাঁর কাছ থেকে দুই পুরিয়া গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর ইউএনও পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৪ অক্টোবর দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে দুই পুরিয়া গাঁজা উদ্ধারের ঘটনায় বেলালকে আট মাসের জেল দেন।
পরে সাজানো ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ায় এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন ভুক্তভুগি বেলাল।
রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেন। রুলে হাইকোর্ট ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা সাজানো বলে কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না এবং যাঁরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন।
একইসঙ্গে রিট আবেদনকারীকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্রসচিব, লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ পাঁচ বিবাদীর কাছে। ওই পাঁচজনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সুপ্রিমকোর্ট প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম