আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা হতে পারেন দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি। আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এই নিয়োগ দেবেন বলে সংশ্নিষ্ট কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুসারে আইন মন্ত্রণালয় ফাইল প্রস্তুত করেছে। ওই ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠানো হবে। নিয়োগ হওয়ার পর ১ অথবা ৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতিকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন। উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগবিধি অনুসারে এ বছরের ১০ নভেম্বর অবসরে যাবেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সংবিধান অনুসারে .প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে যাকে নিয়োগ দেবেন, সে অনুসারে আইন মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট প্রকাশ করা হবে।
আইন ও বিচারসংশ্নিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ছুটিতে যাওয়ার পর বিচার বিভাগে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য সরকার বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকেই প্রধান বিচারপতি হিসেবে মনোনীত করে। তা ছাড়া আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিও তিনি। বিচার বিভাগে আর যাতে কোনো ধরনের অস্থিরতা দেখা না দেয়, সে বিষয়টি নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রেও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগে বিলম্বের বিষয়ে আইন ও বিচার প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বিধি অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির ছুটি ও পদত্যাগসহ যে কোনো বিষয় সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে আইন মন্ত্রণালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পৌঁছানোর কথা; কিন্তু প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন এবং সেখান থেকে পরে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অথচ পদত্যাগ-পরবর্তী সময়ে শূন্যতা পূরণের জন্য সুপ্রিম কোর্টেরই উদ্যোগ নেওয়ার কথা। এ জন্য প্রধান বিচারপতি নিয়োগে বিলম্ব হয়েছে। এখন বিধি অনুসারে ৩১ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেই ওই পদে নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে।
সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুসারে, আপিল বিভাগে বর্তমানে পাঁচজন বিচারপতি কর্মরত আছেন। চাকরিবিধি অনুসারে তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬৭ বছর। সে হিসাবে বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা এ বছরের ১০ নভেম্বর, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর, বিচারপতি মো. ইমান আলী ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অবসরে যাবেন।
যেভাবে শূন্য প্রধান বিচারপতির পদ
স্বাধীনতার ৪৭ বছরে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ছিলেন দেশের প্রথম অমুসলিম প্রধান বিচারপতি। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি তাকে দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। তবে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়সহ বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ছিলেন। এই রায় নিয়ে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের টানাপড়েনের মধ্যে গত ২ অক্টোবর অসুস্থতাজনিত কারণে ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি। পরে তিনি অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ১৩ অক্টোবর ঢাকা ছাড়েন। যাওয়ার আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা লিখিত বক্তব্যে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি অসুস্থ না, পালিয়েও যাচ্ছি না। আমি আবার ফিরে আসব। বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষার জন্য যাচ্ছি। সরকারকে ভুল বোঝানো হয়েছে।’
পরদিন এ ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এক বিবৃতিতে জানায়, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ১১টি দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তার কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে মেয়াদ শেষ হওয়ার ৮২ দিন আগে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। সমকাল