নিম্ন আদালত নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘উনি যে কথা বলেছেন, সেটা অসত্য।’
আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘সাক্ষ্য-প্রমাণ ও তথ্যের ভিত্তিতে আদালত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় দেবেন। আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি— বিচার হয়েছে আদালতে, সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। সেই সাক্ষ্য-প্রমাণ বিবেচনায় নিয়ে নিম্ন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক এই রায় দেবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সকলেই বাংলাদেশের বিচার বিভাগের এবং বিচারালয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সেটাই সকলের ব্যক্ত করা উচিত।’
আজ রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল শনিবার বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভায় বলেন, সবাই জানে স্বাধীন বিচার বিভাগ, কিন্তু স্বাধীন নয়। তারা সবচেয়ে পরাধীন। তারা কিছু করতে পারে না, তারা শুধু হুকুমের নির্দেশ মানতে বাধ্য হয়। সর্বোচ্চ আদালতও বলছেন, দেশের নিম্ন আদালত সরকারের কবজায়।
৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ মামলার রায়ের দেওয়ার দিন নির্দিষ্ট করেছেন আদালত। ওই রায় নিয়ে এখন দুই প্রধান দলের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। রায়ের আগে গতকাল নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকে বিএনপি।
ওই সভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আরও বলেন, ‘বিচার কোথায়? যেখানে অপরাধই নেই, সেখানে বিচারটা হবে কিসের? তারপরও তারা গায়ের জোরে বিচার করতে চায়। গায়ের জোরে কথা বলতে চায়।’
আদালত নিয়ে খালেদা জিয়ার এসব মন্তব্যের বিষয়ে আজ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমি দুঃখিত, উনি এ কথা বলেছেন এবং এটা সম্পূর্ণ অসত্য। আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি, বিচার হয়েছে আদালতে, সাক্ষ্য-প্রমাণ হয়েছে এবং সেই সাক্ষ্য-প্রমাণ বিবেচনায় নিয়ে নিম্ন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক এই রায় দেবেন।’
উচ্চ আদালতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমার ঘোর আপত্তি এই কথায় যে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়েছে।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যদি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান দেখেন, তাহলে ৯৫ অনুচ্ছেদে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেবেন। সেখানে কোথাও লেখা নেই, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তিনি নিয়োগ দেবেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তাঁর বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এবং আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি, সেই সিদ্ধান্তে আমরা শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছি।’
প্রধান বিচারপতি পদে আপিল বিভাগের দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয় গত শুক্রবার। প্রধান বিচারপতি পদে এই নিয়োগের কয়েক ঘণ্টার মাথায় বঙ্গভবনে পদত্যাগপত্র পাঠান আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা।
এই পদত্যাগের বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘একজন বিচারপতি, তিনি পদত্যাগ করতেই পারেন। তাঁর সেই পদত্যাগ করার অভিপ্রায় তিনি ব্যক্ত করেছেন। এটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এখানে আমার কিছু বলার নেই।’
হাইকোর্টে, সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতির সংকট রয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘খুব শিগগিরই দেখবেন হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে।’