সুপ্রিম কোর্টে ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে’ অ্যাটর্নি জেনারেলের অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের ব্যবস্থা করতে প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
আজ মঙ্গলবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্যে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন দেশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। তখনও তার সঙ্গে আমি দেখা করেছি। এরপর বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গেও আমি দেখা করেছি। তারপর অস্থায়ী বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, তখনও আমি তার সঙ্গে দেখো করেছি’।
‘নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতিকে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে আমি আগেও যেটা বলেছি এবং এখনও সেটা বলছি- আইন মন্ত্রণালয়, নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগ এবং আইন সভা এই তিনটার মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। আমি এবারও বলেছি, সেই সেতুবন্ধন অটুট রাখার জন্য আমার সহযোগিতার ঘাটতি কোথাও হবে না’।
এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার বিভাগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে যতটুকু কথা বলা প্রয়োজন আমি কিন্তু সে ব্যাপারে সবসময়ই অত্যন্ত সতর্কতা দেখিয়েছি এবং আমার কোনো বক্তব্যে কখনও বিচার বিভাগকে ছোট করিনি। এ সরকারও কখনোই বিচার বিভাগকে কোনো কারণেই উপেক্ষা করেনি’।
‘সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বিচারপতিদের দীর্ঘসূত্রিতার রায় নিয়ে অনেক জিনিসই বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন এবং সেগুলোকে আমার হ্যান্ডেল করতে হয়েছে। আমি আইনানুগভাবে হ্যান্ডল করেছি। আজকেও আমি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেছি, তাকে যে সহযোগিতা করতে আমাদের কী করণীয় সে নির্দেশনা আমি চেয়েছি এবং সহযোগিতার কথা বলেছি। তার নির্দেশনা পেলেই যেখানে সহযোগিতা প্রয়োজন সেখানে নিশ্চয়ই সহযোগিতা করবো’।
বিচারক নিয়োগের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা একটু অপেক্ষা করেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিচারক নিয়োগ হবে’।
সুপ্রিম কোর্টে দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে অ্যাটর্নির জেনারেলের বক্তব্যের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এটা নিয়েও কথা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল সেদিন ফেলিসিটেশনের সময় কথা বলেছেন। অনেক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সেটার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। আমার বিশ্বাস যে বিচার বিভাগকে পরিচ্ছন্ন করতে আরও যেসব জায়গায় আপনার পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ, আপনি নিবেন বলে আমরা আশা করি’।
আমি প্রধান বিচারপতিকে বলেছি, ‘এই অভিযোগগুলোর তদন্ত করার প্রয়োজন আছে এবং সবাই যেহেতু এক কথা বলছে আপনি তদন্ত করবেন বলে আমার বিশ্বাস’।
০৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে অভিনন্দন জানানোর সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, ‘আদালতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভেতরে একটি বিরাট অংশ ইতোমধ্যে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন এবং যারা এখনও সৎ আছেন এভাবে চলতে থাকলে তাদের পক্ষেও সততা বজায় রাখা কঠিন হবে।’
৪ ফেব্রুয়ারি মাহবুবে আলম বলেছিলেন, ‘সংবিধানের বিধানমতে আপনি ২০২১ সনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির পদে আসীন থাকবেন। এ সময়টা একটি দীর্ঘ সময়, প্রায় চার বছর সময়। বর্তমানে আমাদের বিচার বিভাগের যে অবস্থা, আপনার এই সময়কালে তাতে আপনি আমূল পরিবর্তন আনতে পারেন, যদি এ বিষয়ে আপনি দৃঢ়ভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন।’
‘বিচার বিভাগ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বেশ কয়েকবছর ধরে আমাদের বিচার বিভাগের অবক্ষয় ঘটেছে। সাধারণ জনগণের কাছে এ আদালতের যে ভাবমূর্তি ছিল তাতে পরিবর্তন ঘটেছে।’
আদালতের সময় নিয়ে রাষ্ট্রের প্রধান এ আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘এ আদালতে যোগদানের পর দেখেছি সকাল সাড়ে ১০টায় ঠিক কাঁটায় কাঁটায় অনেক বিচারপতি এজলাসে বসতেন এবং কোর্টে আসীন হওয়া ও কোর্ট থেকে নেমে পড়ার ব্যাপারে কজ লিস্টে যে সময় দেওয়া আছে তার কোনো ব্যত্যয় হতো না। কিন্তু এখন কজ লিস্টের যে সময় ধার্য করে দেওয়া হয়েছে তার সঙ্গে বিচারকদের আদালতে ওঠা বা নামার কোনোই সঙ্গতি নেই। এ অবস্থা চললে বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘এ বিষয়ে অনেকেই ছুটছেন বিচারপতিদের সন্তান, স্ত্রী যারা আইনজীবী হিসেবে নিয়োজিত আছেন তাদের দিকে। তাদের চিন্তা, এদের নিয়ে গেলে হয়তো মামলায় জেতা যাবে। বিচারপতিদের আত্মীয় বা সন্তানরা আগেও এ পেশায় ছিলেন কিন্তু কখনও এরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়নি, এখন কেন বিচার প্রার্থীদের আচরণ এরূপ হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার।’
‘ইতোমধ্যে আদালতের রায় নিয়ে জাল জালিয়াতি শুরু হয়ে গেছে। আদালত থেকে জামিন দেওয়া হয়নি অথচ জামিনের কাগজ তৈরি করে আসামিরা জেল থেকে বেরিয়ে গেছে। কিভাবে ইনফরমেশন টেকনোলজিকে আদালতের কাজে আরও ব্যবহার করা যায়, সে ব্যাপারে নিশ্চয়ই আপনি ব্যবস্থা নিবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’
‘আমি ঢালাওভাবে হাইকোর্টের সমস্ত বেঞ্চের জন্য একথা বলছি না। অনেক বিচারকই বিচারকার্য হাতের মুঠোয় রেখেছেন এবং আদালতের কর্মকর্তাগণ তাদের কথা মতো কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন এবং সঠিকভাবে ও আইনজীবীদের প্রত্যাশা মতো তারা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কতিপয় বিচারপতির আদালত চালানোর অব্যবস্থাপনা দ্বারা সমস্ত বিচারালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তার কারণ, সুগন্ধের পরিধি হয় সীমিত অথচ দুর্গন্ধের পরিধি হয় বিস্তৃত।’
সুপ্রিমকোর্ট প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম