বহুল আলোচিত-সমালোচিত দ্রুত বিচার আইন সংশোধন করে শাস্তি বাড়িয়ে বিল পাস করা হয়েছে। সংশোধিত আকারে পাস হওয়া বিলে শাস্তির মেয়াদ ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৭ বছর করা হয়েছে।
আজ রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একাধিক সদস্য জনমত যাচাই প্রস্তাব দেন। তারা তাদের প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরলেও কণ্ঠভোটে তা নাকচ হয়ে যায়।
তবে বিলে সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েও অনুপস্থিত ছিলেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম ওমর, সেলিম উদ্দিন ও রুস্তম আলী ফরাজী। পরে বিলটি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কণ্ঠভোটে দিলে তা সর্বসম্মতক্রমে পাস হয়।
এর আগে, চলতি অধিবেশনের গত ২২ জানুয়ারি বিলটি উত্থাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এরপর বিলটি অধিকতর যাচাই-বাছাই করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় বিলটি যাচাই-বাছাই করে দ্রুততার সঙ্গে রিপোর্ট দেয় সংসদীয় কমিটি। এছাড়া পাস হওয়া বিলে ‘বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট’ নিয়োগের ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে।
বিলে ২০০২ সালের এ সংক্রান্ত আইনের ৪(১) ধারা সংশোধন করে শাস্তির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই ধারায় ‘আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ’ এর জন্য এতোদিন সর্বনিম্ন দুই বছর এবং সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ডের বিধান ছিলো।
সংশোধিত আইনের খসড়ায় ওই সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে সর্বনিম্ন দুই বছর ও সর্বোচ্চ সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি ‘আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ’ করলে দ্রুত বিচার আইনে তার বিচার হবে।
যেমন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বা বেআইনি বল প্রয়োগ করে কোনো ব্যক্তি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদা, সাহায্য বা অন্য কোনো নামে অর্থ বা মালামাল দাবি বা আদায় বা আদায়ের চেষ্টা করলে তা এ আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
এছাড়া স্থল, রেল, জল বা আকাশপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, ইচ্ছার বিরুদ্ধে যানের গতি ভিন্নপথে পরিবর্তন করা, ইচ্ছাকৃতকোনো যানবাহনের ক্ষতি করা; ইচ্ছাকৃতভাবে সরকার, ব্যক্তি বা কোনো প্রতিষ্ঠানের স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি ভাংচুর করাসহ ৯ ধরনের অপরাধের জন্য এ আইনের অধীনে সাজা দেওয়া যাবে।
পাস হওয়া বিলে আদালত গঠনের বিধানেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিদ্যমান আইনের ৮(২) ধারায় বলা হয়েছে, আদালত সরকার কর্তৃক নিযুক্ত একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ে গঠিত হবে। এতে সরকার বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটকে উক্ত আদালতের বিচারক নিযুক্ত করবেন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০২ সালে দ্রুত বিচার আইন জারি করে দুই বছরের জন্য তা কার্যকর করা হয়। এরপর বেশ কয়েক দফা ওই আইনের মেয়াদ বাড়ায় সরকার। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৩ এপ্রিল এই আইনটি সংশোধন করে ৫ বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ায় বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার।