কলা ভবন থেকে শিক্ষা ভবন অভিমুখে ছাত্রদের মিছিল… স্লোগানে মিছিলে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয়… সামরিক শাষন মানিনা… মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিল কর… করতে হবে… হঠাৎ করেই গুলিতে প্রকম্পিত চারিদিক… মিছিলে পুলিশে ট্রাক তুলে দিয়ে শুরু হয় বর্বরতার এক ভয়াল নিদর্শন। স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের হিংস্র পুলিশ বাহিনির উন্মত্ততায় একে এক লুটিয়ে পরে জাফর, জয়নাল, দিপালী সাহা। আহতদের আহাজারীত হাসপাতাল গুলোতে তৈরী হয় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের… কলাভবনেও গুলি টিয়ার সেলের আঘাতে ছাত্র-ছাত্রীদের উপর নৃশংস হামলা। গ্রেফতার হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা.. কারফিউ জারি। বলছি ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারীর কথা। যেদিন স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে পালিত হয় স্বৈারাচার প্রতিরোধ দিবস। সেই সময় ছাত্র আন্দোলনের পালে হাওয়া লাগায় তৎকালীন আমলে প্রণিত “মজিদ খান শিক্ষানীতি”। সাম্প্রদায়িকতা, শিক্ষা বাণিজ্যিকীকরণ আর শিক্ষা সংকোচন-কে ভিত্তি ধরে প্রণিত এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. বশির আহমেদ (আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী তৎকালীন ছাত্র) সেই দিনের স্মৃতিচারণা করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ১৪ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৮৩ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর আহ্বানে সকাল থেকে জড়ো হতে শুরু হলো বট তলা, আমরা সার্জেন্ট জহুরুল হক হল থেকে মিছিল করে বটতলায় সমবেত হয়ে সচিবালয় অভিমুখে আমাদের মিছিল আমাদের স্লোগান ছিল মজিদ খানের শিক্ষা সংকোচন নীতি মানি না, মানি না… শিক্ষা মোদের অধিকার, এই অধিকার সবার চাই। আমাদের মিছিল যখন হাইকোর্ট মাজার গেইট বর্তমান শহীদ শিক্ষা স্মৃতি স্তম্ভের সামনে আসে তখন-ই সামরিক জান্তা অতর্কিত গুলি চালায়। তাতে করে জয়নাল, জাফর, মোজাম্মেল, দিপালীসহ আরো অনেকে শহীদ হয়ে ছিলেন। এই স্থান থেকে আমি ও ড. মোস্তাক, স্বপনদাসহ আরো অনেক-কে চোখ বেঁধে ক্যান্টমেন্ট নিয়ে যায়। আমার সাথী শহীদের স্মৃতি মিনার ও শিক্ষা স্মৃতি স্তম্ভ আমি নির্মাণ করেছিলাম যা তৎকালিন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা রাতের অন্ধকারে ভেঙে দিয়েছিল যা আমি হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকার্টে আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে পুন: প্রতিষ্ঠা করেছি। আজ সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষা স্মৃতি স্তম্ভ ফুলে ফুলে ঢাকা। এই ফুলের মধ্যে আমি খুঁজে পাই বিভেষিকাময় স্মৃতি, আবেগ, অনুভূতি ও অঙ্গীকার…উল্লেখ্য এখানে ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা অধিকার আন্দোলনে শহীদ হয়েছিল অজিউল্যাহ বাবুলসহ আরো অনেকে।