স্বামী দিন-রাত পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইটে বুঁদ হয়ে থাকেন। বিয়ে ভাঙতে বসেছে। তাই দেশে পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করার আর্জি নিয়ে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে এক মহিলা।
মুম্বইয়ের বাসিন্দা ওই মহিলা শীর্ষ আদালতে তাঁর কৌঁসুলি কমলেশ ভাসওয়ানির মাধ্যমে জানিয়েছেন, পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইটে তাঁর স্বামী ভীষণ ভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। নাওয়া-খাওয়া, কাজকর্ম ভুলে দিবারাত্র ওই ওয়েবসাইটগুলিতেই বুঁদ হয়ে থাকেন তাঁর স্বামী। তার ফলে ওই মহিলার দাম্পত্য জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তাই দেশে পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইটগুলিকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার আর্জি জানিয়েছেন ওই মহিলা।
পারিবারিক আদালতে ইতিমধ্যেই বিবাহ বিচ্ছেদেরও আর্জি জানিয়েছেন ওই মহিলা।
মহিলার অভিযোগ, তাঁর ৩৫ বছর বয়সী স্বামী এতটাই ‘বিকৃতমনা’ হয়ে পড়েছেন যে, তিনি ঘরে ও কর্মক্ষেত্রে তাঁর স্বাভাবিক কাজগুলিও আর করেন না। এমনকী, মেটাতে পারেন না তাঁর স্ত্রীর স্বাভাবিক শারীরিক চাহিদাও। তার ফলে, রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছেন ওই মহিলা।
দেশে পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করার আর্জি জানিয়ে ২০১৩ সালে এক আইনজীবীর দায়ের করা মামলারও শরিক হতে চেয়েছেন তিনি।
পর্নোগ্রাফি পুরোপুরি নিষিদ্ধ: কেন্দ্র কতটা চায়
ভারতে শিশু পর্নোগ্রাফি অবৈধ হলেও, সব ধরনের পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইট বাড়িতে দেখা আর তা ছড়ানোয় কোনও আইনি বাধা নেই। প্রকাশ্যে সব ধরনের পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইট দেখা ও ছড়ানো নিষিদ্ধ করা সম্ভব কি না, এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের মতামত জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
তবে কেন্দ্রীয় সরকার এ ব্যাপারে খুব বেশি এগোতে রাজি নয়। কেন্দ্রের তরফে শীর্ষ আদালতে জানানো হয়েছে, তারা চায় শুধু শিশু পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ থাকুক দেশে। তার বেশি এগোলে ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে। সরকারের কাজ কখনও ‘নীতি পুলিশ’-এর মতো হতে পারে না।
সুপ্রিম কোর্টে তাঁর আর্জিতে কী বলেছেন ওই মহিলা?
সুপ্রিম কোর্টে তাঁর আর্জিতে ২৭ বছর বয়সী ওই মহিলা বলেছেন, ‘‘ওই ওয়েবসাইটগুলি দেখে উনি (মহিলার স্বামী) শারীরিক ভাবে এতটাই অক্ষম ও শক্তিহীন হয়ে পড়েছেন যে, আমার স্বাভাবিক শারীরিক চাহিদাও আর মেটাতে পারছেন না। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে উনি বহু বার আমাকে ওরাল সেক্সে বাধ্য করিয়েছেন। দাম্পত্যে ওঁর এই অস্বাভাবিক চাহিদায় আমার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।’’
মহিলা এও বলেছেন, বিয়ের অনেক পরে তিনি জানতে পারেন কৈশোর থেকেই তাঁর স্বামী পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়েন।
শীর্ষ আদালতে তাঁর আর্জিতে ওই মহিলা বলেছেন, পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতাই এ দেশের প্রগতির অন্তরায় হয়ে উঠেছে। যুবকরা দিনকে দিন বেশি সংখ্যায় এতে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। তার ফলে, হয়ে পড়ছেন বিকৃতমনা। এতে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ নষ্ট হচ্ছে। যৌন অপরাধ বাড়ছে, উত্তরোত্তর কমছে স্বাভাবিক যৌন ক্ষমতা। তার বড় প্রভাব পড়ছে দাম্পত্য সম্পর্কগুলিতে।
পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ: আরও আর্জি আদালতে
গত বছর আদালতে এমনই একটি আর্জি জানিয়েছিলেন আরও এক মহিলা। তাঁরও অভিযোগ ছিল, পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইটগুলি তাঁর দাম্পত্য জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। হালে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীও অশ্লীল পর্নো-সাইটগুলি ‘ব্লক’ করার আর্জি জানিয়েছেন আদালতে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।