রায়ের প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চললেও কারাগার থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে না পারায় দলের আইনজীবী ও নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। দীর্ঘ ১১ দিন পর সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রায়ের সার্টিফাইড কপি বা অনুলিপি হাতে পেলেও তিনি শিগগিরই কারাগার থেকে মুক্ত হতে পারবেন কি-না, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে শঙ্কা-সংশয়।
একইসঙ্গে চেয়ারপারসনের জেলে যাওয়ার পেছনে দলের ভুল কৌশল নাকি আইনি দুর্বলতা দায়ী-তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
এরইমধ্যে বিএনপির একটি বড় অংশ মনে করছে খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি নিয়ে কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। মূলত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর খালেদা জিয়া ব্যক্তিগতভাবে আবারো নিজের আইনজীবীগোষ্ঠীর কোন্দলের মুখোমুখি। ওয়ান ইলেভেনেও আইনজীবীরা কোন্দলে ব্যস্ত ছিলেন। এখন বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে তিন গ্রুপের কর্মকাণ্ড আলাদা আলাদাভাবে চলছে। সবাই নিজের ‘দৌড়’ দেখিয়ে আলোচনায় আসতে ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন।
রায়ের সার্টিফাইড কপি পেতে সাত আইনজীবী পৃথক আবেদন করার পর সোমবার সানাউল্লাহ মিয়া এ কপি তুলেছেন। এনিয়ে অন্য আইনজীবীরা খুশি নন। এরপর রাতে সাবেক অ্যার্টনি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলীর চেম্বারে কয়েকজন আইনজীবী আপিলের বিষয়ে বৈঠক করেন। সেখানে দলের বেশীরভাগ সিনিয়র আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠকে আজ (মঙ্গলবার) আপিল করার সিদ্ধান্ত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন আইনজীবী নেতা জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির তিনজন গুরুত্বপূর্ণ সিনিয়র আইনজীবী নেতা পৃথকভাবে আপিল আবেদনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। তারা দলের হাইকমান্ডের কাছে নিজেদেরকে ফোকাস করার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। সোমবার রাতে এজে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদিন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমদ তালুকদার, ব্যারিস্টর নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার হেলালসহ ১২-১৩ জন আইনজীবী বৈঠক করেন। সেখানে চেয়ারপারসন যাদের ওপর আস্থা রাখেন তেমন গুরুত্বপূর্ণ সিনিয়র আইনজীবীরা ছিলেন না।
ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন আইনজীবী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের সিনিয়র অনেক আইনজীবীই খালেদা জিয়ার আপিল করা নিয়ে সিরিয়াস নন। তার কারাবাস নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো ভাবান্তর নেই। আমরা সিনিয়র সবাইকে ওই বৈঠকে থাকতে বলেছিলাম, কিন্তু তারা আসেন নি। ওনারা যদি আলাদাভাবে আপিল করতে চান করতে পারেন, আমরাও করবো।
জানা গেছে, আইনজীবীদের মধ্যে এই কোন্দল ও অনৈক্যের বিষয়টি দলে এখন ওপেন সিক্রেট। সিনিয়র নেতারাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবে কেউ এই বিষয়ে মুখ খুলতো চান না। কারণ সবাই মামলায় জর্জরিত। তাই আইনজীবীদের ঘাটাতে চান না কেউ। সূত্র: বাংলানিউজ