হিমাগারে আলুর বস্তা বহনে নিয়োজিত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ শ্রমিকের ক্ষেত্রে ৫০ কেজি ও নারী শ্রমিকের ক্ষেত্রে ৩০ কেজি ওজনের বেশি ভার বহন নয়—শ্রম আইন ও বিধির এমন বিধান প্রয়োগের নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সেলিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে সোমবার (৫ মার্চ) এ রায় দেন। কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়ে রায়ে আদালত বলেছেন, বিষয়টি চলমান তদারকিতে থাকবে।
২০০৬ সালের শ্রম আইনের ৭৪ ধারা বলেছে, কোনো প্রতিষ্ঠানে কোনো শ্রমিককে ক্ষতি হতে পারে, এমন কোনো ভারী জিনিস উত্তোলন, বহন অথবা নাড়াচাড়া করতে দেওয়া যাবে না। আর ২০১৫ সালের বিধিমালার ৬৩ বিধিতে অতিরিক্ত ওজন বিষয়ে বলা আছে। এর ভাষ্য, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ৫০ কেজি ও নারী ৩০ কেজির অতিরিক্ত ওজন বহনের জন্য নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
রাজশাহীতে সাধ্যের বেশি ভার বহনে এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা তুলে ধরে শ্রম আইন ও বিধির ওই দুটি বিধান প্রয়োগে নির্দেশনা চেয়ে রাজশাহীর পবা উপজেলা লোড-আনলোড কুলি শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষে গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিটটি করা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দেন। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল রায় দেওয়া হয়।
আদালতে রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সুহান খান, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী জহিরুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী জিনাত হক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জাকির হোসেন।
রায়ে আদালত ছয় দফা নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী সুহান খান।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শ্রম আইন ও বিধিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, তা নির্ধারণে প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান বা পরীক্ষণের জন্য কারাখানা পরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিমালার লঙ্ঘন হলে কোনো পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়ার দশ কার্যদিবসের মধ্যে তা অনুসন্ধান, তদন্ত ও আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ প্রতিপালন না হলে কর্তৃপক্ষকে শ্রম আদালতে অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। শ্রম আইন ও বিধিমালা সম্পর্কিত অধিকারের তথ্যাদি প্রচার, প্রকাশ ও সরবরাহ করতে এবং কর্মশালা আয়োজনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জাকির হোসেন বলেন, হিমাগারে আলুর বস্তা বহনে নিয়োজিত শ্রমিকদের ক্ষেত্রে আগে ৮০ কেজি পর্যন্ত ভারবহন করানো হতো। রায়ে পুরুষদের ক্ষেত্রে ৫০ কেজি ও নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ৩০ কেজির বেশি ভারবহন নয়—শ্রম আইন ও বিধির এমন বিধান প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রায় পাওয়ার চার মাস পর নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে হলফনামা আকারে আদালতে প্রতিবেদন দিতে শ্রমসচিব ও প্রধান কারাখানা পরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।