সালমা হাই টুনী: বিয়ে একটি পারিবারিক বন্ধন। বিয়ের মাধ্যমে একজন নারী ও পুরুষ শারীরিক, মানসিক ও আত্মিকবন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের মাধ্যমে দুই হাত এক করে সারাজীবন একসঙ্গে থাকার জন্য শপথ করে। কিন্তু এই সংসার জীবন সবসময় সুখের হয় না। সংসার জীবনেও চলে ভাঙাগড়ার খেলা।
জীবনে চূড়ান্ত বিপর্যয় থেকে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে রক্ষার জন্য ইসলামে তালাকের বিধান রয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন চরমভাবে বিরোধ দেখা দেয়, পরস্পর মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ ও মাধুর্যমণ্ডিত জীবনযাপন যখন একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখনই আসে তালাকের প্রশ্ন।
তালাক কী?
পারিবারিক জীবন অনেক ক্ষেত্রে হয়ে দাঁড়ায় তিক্ত ও বিষক্ত। একজনের মন যখন অন্যজন থেকে এমনভাবে বিমুখ হয়ে যায় যে, তাদের শুভ মিলনের আর কোনো সম্ভাবনা থাকে না। ঠিক তখনই বিয়েবিচ্ছেদের কথা বলা হয়েছে ইসলামে।
মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে- ‘কোনো পুরুষ তাহার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাহিলে তাহাকে মুসলিম আইনে অনুমোদিত যে কোনো পদ্ধতিতে ঘোষণার পরই তিনি তাহার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন, এ মর্মে চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে নোটিশ প্রদান করবেন এবং স্ত্রীকেও উহার নকল দিবেন’ অর্থাৎ তালাক প্রদান বা ঘোষণার ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়তের প্রবর্তিত পদ্ধতিই হচ্ছে মুসলিম পারিবারিক আইনের পদ্ধতি। তাই শরিয়ত প্রবর্তিত তালাকসংক্রান্ত বিধানাবলি ভালোভাবে জানা ও বোঝা খুবই জরুরি। বিশেষ করে নিকাহ রেজিস্ট্রারদের এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
আমাদের অনেকেই আছেন যারা অনেক সময় রাগের মাথায় বা অন্য যে কোনো কারণে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে থাকেন। পরে তালাক দেয়া স্ত্রীর সঙ্গে কীভাবে সংসার করবেন তাও বুঝে উঠতে পারে না।
আজ ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম পাঠকদের জন্য থাকছে কীভাবে পুনরায় তালাক দেয়া স্ত্রীকে বিয়ে করবেন।
তালাকের লিখিত নোটিশ
স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পর স্বামী চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে নোটিশ প্রদান করবেন এবং স্ত্রীকেও তার নকল দেবেন। স্ত্রী হাতে চিঠি পৌঁছানোর পর একটি সালিশি বৈঠক হবে। যদি শেষ পর্যন্ত মীমাংসা না হয় তবে তিন মাস ১০ দিনের মধ্যে তালাক কার্যকর হবে।
তালাক কার্যকরের পর
তালাক কার্যকরের পর যদি তালাক দেয়া স্ত্রীকে আবার গ্রহণ করতে চান, তবে আগের মতো নিয়ম মেনে আবার বিয়ে করতে হবে।
তালাক কার্যকরের আগে
তালাক দেয়ার পর যে ৯০ দিন সময় হাতে থাকে, ওই দিনের মধ্যে যদি তালাক দেয়া স্ত্রীকে গ্রহণ করতে চান, তা হলে একটি আবেদনপত্রে বিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে নিজের ভুল স্বীকার করে নিলে পুনরায় তালাক দেয়া স্ত্রীকে গ্রহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না। আগের মতো সংসার করতে পারবেন।
বিয়ে রেজিস্ট্রেশন
তালাক দেয়ার পর যে সময় হাতে থাকে, তার মধ্যে স্ত্রীকে ভুল স্বীকার করে গ্রহণ করলে কোনো রেজিস্ট্রেশন লাগবে না। কিন্তু তালাক কার্যকরের পর স্ত্রীকে গ্রহণ করতে চাইলে আবারও বিয়ে পড়িয়ে নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
পুনরায় বিয়ের পর স্বামী যদি স্ত্রীর প্রতি কোনো ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে থাকেন, তবে স্ত্রী তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেবেন। এমনকি যদি কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে স্ত্রী তালাকের বিধান থাকে, তবে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারবেন।
লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।