আল ইমরান খান:
আমাদের আইনাঙ্গন নবীন বিচারক এবং নবীন আইনজীবীদের পদচারণায় এখন মুখর। আমার পরিচিত অনেকে বিচার বিভাগীয় পদে যোগদান করেছেন আবার অনেকে বেছে নিয়েছেন আইন পেশা। সবাইকে সঠিক উপায়ে স্বাগতম জানাতে পারিনি। তবে আজকের এই লেখায় সকল নবীন বিজ্ঞ ভাই/বন্ধুদের স্বাগতম জানানোর একটি প্রয়াস থাকবে।
প্রথমেই বলি আমি এই টিপস প্রদানের ক্ষেত্রে ভারতের চন্ডীগড় জুডিসিয়াল একাডেমীর ডিরেক্টর ড. বলরাম কে. গুপ্তার একটি লেখার সাহায্য নিয়েছি। ড. গুপ্তাকে বলা হয় ‘টিচার অব দ্য জাজেস’ কারণ পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাইকোর্টের চীফ জাস্টিস থেকে শুরু করে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং প্রথিতযশা আইনজীবিদের অনেকে বলরাম স্যারের ছাত্র। চন্ডীগড়ে ট্রেনিং-এর সুবাদে সেখান থেকে প্রাপ্ত অনলাইন ল’ নিউজলেটার থেকে গুপ্তা স্যারের একটি অনুচ্ছেদ এই লেখার মূল উপাদান।
আসলে পড়াশোনা আমরা সবাই করি, কিন্তু পড়াশোনাই কি সফলতার একমাত্র চাবিকাঠি? –না। বরং পড়াশোনার সাথে আনুষঙ্গিক বিষয়াদি মিলে মানুষের প্রকৃত মূল্যায়ণ। একজন বিচারক বা আইনজীবীর প্রথম ছবক হওয়া উচিৎ কিভাবে আদালতে তার টেম্পারমেন্ট ধরে রাখতে হয়…
বিচারকদের বিষয়ে বলতে গিয়ে ড. বলরাম কে গুপ্তা প্রথমে শুরু করেছেন লর্ড ডেনিং এর একটি পরামর্শ দিয়ে। লর্ড ডেনিং বিচারকদের মাথা ঠান্ডা রেখে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে ডেনিংয়ের মতে বিচারকদের টেম্পারমেন্ট হবে ‘সায়েন্টিফিক টেম্পারমেন্ট’ অর্থাৎ বিচারকগণ অবশ্যই পরিস্থিতি বুঝে তার বিচারালয় পরিচালনা করবেন। অহেতুক বিরক্তি প্রকাশ, অনাবশ্যক অতিকথন, পূর্ব থেকে পেন্ডিং মামলা বিষয়ে মন্তব্য ইত্যাদি বিচারকদের বিচারিক টেম্পারমেন্ট এর সাথে যায় না। যতদূর সম্ভব বিতর্ক এড়িয়ে বিচারালয়ে বিচারকের কাজ তার বিচারিক স্বত্বাকে উচ্চমূল্যে ধারণ করে। বিচারকদের টেম্পারমেন্ট সম্পর্কিত কিছু বাস্তব ঘটনা ড. গুপ্তা তার আর্টিকেলে লিখেছেন।
ভারতীয় সুপ্রীম কোর্টের পাঁচ বিচারপতি সমন্বয়ে গর্ঠিত একটি কন্সটিউশনাল বেঞ্চে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানী চলছিল। বিচারপতিগণ আইনের বিভিন্ন বিষয়ের উপরে নিযুক্তীয় বিজ্ঞ কৌশুলীর কাছে প্রশ্ন (কুয়েরী) রাখছিলেন। বিজ্ঞ কৌশুলী বেঞ্চে উপবিষ্ট সর্ব কনিষ্ঠ বিচারপতির প্রশ্নের উত্তর প্রদানে অগ্রসর হলে মাননীয় প্রধাণ বিচারপতি তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন প্রধাণ বিচারপতির প্রশ্নের উত্তর আগে দিতে হবে। বিজ্ঞ আইনজীবী ঐ কনিষ্ঠ বিচারপতির প্রশ্নের উত্তর আগে দিতে চেয়েছিলেন কারণ ঐ কনিষ্ঠ বিচারপতির প্রশ্নের মধ্যে সকল বিচারপতিদের প্রশ্নের উত্তর নিহিত ছিল। ঐ প্রশ্ন ছিল যথেষ্ট বিচক্ষ্ণ। ড. গুপ্তা প্রধাণ বিচারপতির এরুপ ইন্টারফেয়ারেন্সকে–ল্যাক অব প্রপার জুডিসিয়াল টেম্পারনেন্ট হিসাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন।
আইনজীবীদেরও আদালতে সঠিক টেম্পারমেন্ট বজার রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আদালতকে মিসলিড করা, ভুল আইনের সাইটেশণ করা, আদেশ পক্ষে না গেলে রিএ্যাক্ট করা ইত্যাদি আইনজীবীর আইনজীবী সেন্সের সাথে বেমানান। আদালতের কোন আদেশে কেউ সংক্ষুব্ধ হতেই পারেন… এই কারণে উপরের আদালত আছে। ফলে, লইয়ারস’ টেম্পারমেন্ট ও ধরে রাখা ভাল আইনজীবীর বৈশিষ্ট। ড. গুপ্তার আর্টিকেলে বর্ণিত যে, কোন এক মামলার যুক্তিতর্ক শুনানীকালে বিবাদীপক্ষের আইনজীবী তার মামলায় ইংলিশ রেফারেন্স পেশ করতে চাইলে জজ সাহেব সেটি প্রাসঙ্গিক নয় মর্মে তা সাইট করেননি; কিন্তু এটর্ণি জেনারেল তার সাবমিশনে ইংলিশ আইনের রেফারেন্স প্রদান করেন। পরবর্তীতে বিচারক বাদী পক্ষের আইনজীবীকেও ইংলিশ রেফারেন্স ব্যবহার করার অনুমতি প্রদান করেন। কিন্তু বাদী পক্ষের আইনজীবী এক্ষেত্রে খুব কর্কশ এবং কিছুটা শোভনীয় নয় এমন উত্তর প্রদান করেন। বাদীর আইনজীবী এক্ষেত্রে বলেন, I was not allowed to cite on my turn. I, therefore, refuse to cite them. In fact, you may do self study of the English cases. বস্তুতঃ বাদীর আইনজীবির এরুপ উত্তর জুডিসিয়াল শিষ্ঠাচার বহির্ভূত।
ড. গুপ্তা সর্বশেষ বলেন যে, আইনজীবী আছেন দুই প্রকার। এক. ভাল আইনজীবী অর্থ যিনি ভাল আইন জানেন। আরেক প্রকার আইনজীবি আছেন যাকে বলা হয় গ্রেট ল’ইয়ার অর্থ যিনি বিচারককে জানেন বা তাকে পড়তে পারেন। গ্রেট ল’ইয়ারের সংজ্ঞায় ড, গুপ্তা সংক্ষেপে বলেন যে, a lawyer is great, if he knows the judge. What does one mean by knowing the judge? Knowing the judge means – understanding the judge. What pleases the mind of the judge? Do you need to feed him on facts or on law or both? What is his strength? A lawyer should know the mind of the judge. Cater accordingly. A lawyer must be able to feel the pulse of the judge. It is this which makes the lawyer great.
সো, দ্যাট ইজ অল এ্যাবাউট মাই মিলিয়ন ডলার টিপস ফর দ্য টাইম বিং টু বি দ্য গ্রেইট।
লেখক: মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, চট্টগ্রাম। (ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহীত)