জামালপুর পৌরসভার রশিদপুর গ্রামে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক কলেজছাত্রকে এসিড মেরেছে এক ছাত্রী। আহত ওই ছাত্রের নাম মাহমুদুল হাসান মারুফ (১৭)। এসিডে তার মুখমণ্ডল ও কাঁধ ঝলসে গেছে।
তাকে গতকাল শুক্রবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) রাতে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ওই ছাত্রী ভাবনা আক্তার রিয়া ও তার মা হাসি বেগম সুজেদাকে আটক করেছে।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, রশিদপুর গ্রামের আহত মাহমুদুল হাসান মারুফ জামালপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ইলেকট্রনিকস টেকনোলজির প্রথম বর্ষের ছাত্র। একই গ্রামের বাসিন্দা ও ঝাউগড়া বঙ্গবন্ধু কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী ভাবনা আক্তার রিয়া মাহমুদুল হাসান মারুফকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। কিন্তু মারুফ তাতে সাড়া দেয়নি। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মারুফ তার বন্ধু সাইফুলকে নিয়ে রিয়ার বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় রিয়া মারুফকে বাড়ির ভেতরে বৈদ্যুতিক লাইনের ত্রুটি ঠিক করে দিতে বলে। মারুফ দিনের বেলা এসে ঠিক করে দেবে বলে চলে যাচ্ছিল। এ সময় আকস্মিক মারুফের মুখে এসিড ছুড়ে মারে রিয়া। এরপর মারুফ চিত্কার দিয়ে দৌড়ে রশিদপুর বাজারে যায়। স্থানীয়রা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
এসিডে মারুফের দুই চোখ ছাড়া মুখমণ্ডলের বেশির ভাগ ঝলসে গেছে। তার ডান কাঁধেও সামান্য দগ্ধ হয়েছে। গতকাল তাকে উন্নত চিকিত্সার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।
জামালপুর সদর থানা পুলিশ গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রিয়া ও তার মা হাসি বেগম সুজেদাকে রশিদপুরের বাড়ি থেকে আটক করেছে। এ ঘটনায় মারুফের বাবা দুদু মিয়া বাদী হয়ে জামালপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
এসিডদগ্ধ মারুফ গতকাল বলে, ‘রিয়া আমাকে ঘরে যেতে বললে আমি যাইনি। এ সময় রিয়া দরজা থেকে আমার মুখের দিকে কী যেন ছুড়ে মাড়ে। আমি সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে দৌড় দিই। রিয়ার সাথে আমার কোনো প্রেমের সম্পর্ক নেই। রিয়াই আমাকে মাঝেমধ্যে ফোন করে প্রেমের প্রস্তাব দিত। আমি রাজি হয়নি। ঘটনার সময় ওই বাড়ির একটি কক্ষে কিছু লোকজনের কথা শুনেছি।’
তবে কলেজছাত্রী রিয়া বলে, ‘আমি মারুফকে চিনি না। ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্কও নেই। যে সময়ের কথা বলছে আমি আর আমার মা তখন বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলাম। আমি তাকে এসিড মারিনি। তারা মিথ্যা অভিযোগ করে আমাদের ফাঁসাচ্ছে।’
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. শফিকুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভিকটিম এসিড দ্বারাই আক্রান্ত হয়েছে। এখানে এই ধরনের রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় মারুফকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে।’
জামালপুর সদর থানার ওসি মো. নাছিমুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, মারুফ নামে এক যুবক এসিড নির্যাতনের ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে। আটক রিয়া ও তার মাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে সোপর্দ করা হবে। ঘটনাটি তদন্ত করে জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। সূত্র: কালের কণ্ঠ