লড়াইটা কঠিন। এক দিকে, বাবা মারা যাওয়ার পরে দুই ভাইবোনের দায়িত্ব নিতে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ। অন্য দিকে, কুমারী মা হিসেবে শিশুসন্তানের পিতৃ-স্বীকৃতির লড়াই। সঙ্গে ছিল আদালতে ন্যায়ের লড়াই।
শুক্রবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সিউড়ি আদালতের দরজায় পৌঁছে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল বছর সতেরোর ওই কুমারী মায়ের। কোলে বছর আড়াইয়ের ছেলে, পাশে দাঁড়ানো মায়ের দিকে তাকিয়ে কিশোরী বলে ফেলে— ‘‘আজ তা হলে আমার সব গেল! সাক্ষ্য হল না, পরীক্ষাও দিতে পারলাম না।’’ আদালতের এক ল’ক্লার্ক জানতে পারেন, ধর্ষণের মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসেছে মেয়েটি। এ বছর মাধ্যমিকও দিচ্ছে। আদালতে হাজিরার জন্য এ দিন ইতিহাস পরীক্ষা দিতে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে পারেনি মেয়েটি।
দ্রুত বদলে যায় পরের ঘটনাক্রম।
ল’ক্লার্কের থেকে মেয়েটির পরীক্ষার কথা শুনেছিলেন সিউড়ির পকসো আদালতের বিচারক দীপেন্দ্রনাথ মিত্র। কিশোরীকে ডেকে পাঠান তিনি। সরকারি আইনজীবী সৈয়দ শমিদুল আলম জানান, বিচারক জানতে চান— ‘‘তুমি পরীক্ষা দেবে?’’ উত্তর শুনে দেরি করেননি। সিউড়ি থানার আইসি দেবাশিস পাণ্ডাকে ডেকে নির্দেশ দেন, সযত্নে ও সময়মতো মেয়েটিকে পৌঁছে দিতে হবে রামপুরহাটের পরীক্ষাকেন্দ্রে। মেয়েটি পৌঁছল কি না, সেই খবরও তাঁকে জানাতে হবে। সাক্ষ্য দেওয়ার পরবর্তী তারিখ দেন ১৭ এপ্রিল। ঘড়িতে তখন সকাল সাড়ে ১০টা। পৌনে এগারোটার মধ্যে সিউড়ি আদালতে পৌঁছে যায় পুলিশের গাড়ি। ঘণ্টাখানেকেই ওই কিশোরী পৌঁছে যায় ৪৫ কিলোমিটার দূরের পরীক্ষাকেন্দ্রে।
পুলিশ সূত্রে খবর, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় পড়শি যুবকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয় রামপুরহাটের একটি স্কুলের ওই ছাত্রীর। অভিযোগ, বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে তার সঙ্গে একাধিক বার সহবাস করে ওই যুবক। অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে, দায় অস্বীকার করে। তার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের জুলাইয়ে থানায় অভিযোগ হয়। সে বছরই পুত্রসন্তানের জন্ম দেয় মেয়েটি। অভিযুক্ত জেল হেফাজতে।
সেই মামলারই সাক্ষ্য দিতে এ দিন আদালতে এসেছিল ওই কিশোরী। কিন্তু, কর্মবিরতি চলছে আইনজীবীদের। সে কথা শুনে হতাশ হয়ে পড়ে মেয়েটি। বিকেলে পরীক্ষা দিয়ে মুখে চিলতে খুশি। তার মা বলছিলেন, ‘‘ভাবতে পারিনি মেয়ে আজ পরীক্ষা দিতে পারবে। বিচারককে অসংখ্য ধন্যবাদ।’’ মেয়েটির স্কুলের প্রধান শিক্ষক কাজল গুপ্ত বলছেন, ‘‘ও আরও এগিয়ে যাক। আমরা পাশে রয়েছি।’’
সূত্র- ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা