নিয়ম না মেনে সড়কে গাড়ি নিয়ে সাঁ করে চলে গেলেন, ভাবছেন কেউ দেখেনি বা পুলিশ কিছু বলেনি। কিন্তু বাসায় গিয়ে দেখলেন, ট্রাফিক আইন না মানার অপরাধে পুলিশের নোটিশ হাজির! উন্নত দেশের মতো এমন ব্যবস্থা চালু হয়েছে বাংলাদেশেও। এতে সফলতাও আসছে। ‘কেউ দেখেনি’ মনে করে আইন না মানার প্রবণতাও কমছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।
বেশ কিছুদিন ধরে রাজধানীতে ভিডিওচিত্রসহ প্রমাণ রেখে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম এই চার বিভাগে রয়েছে চারটি মিডিয়া টিম। তারা চাহিদামতো ও ঘুরে ঘুরে ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছেন। বিশেষ করে অবৈধ পার্কিং, উল্টোপথে চলাচলকারীদের বিরুদ্ধে এ মামলা বেশি দেওয়া হচ্ছে বলে জানান ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা।
ভিডিও ও ছবিসহ মামলা হওয়ায় প্রভাবশালীদের দাপট দেখানোর সুযোগও অনেকটা কমেছে বলে দাবি করছেন মাঠপর্যায়ের ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, সরাসরি কারও বিরুদ্ধে মামলা দিতে গেলে প্রথমে তারা (অভিযুক্ত) মানতে চান না। অনেকেই ক্ষমতার দাপট দেখান। কিন্তু ভিডিওসহ মামলা চালু হওয়ার পর থেকে তারা আর সেই সুযোগ পাচ্ছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট বলেন, আইন ভাঙা নিয়ে যেন একটা প্রতিযোগিতা হয়। সব শ্রেণির মানুষই সে প্রতিযোগিতায় থাকে। কিন্তু যারা প্রভাবশালী তারা আইন ভাঙলেও তা মানতে চান না। সব সময় ছাড় চান। আর আমরা যদি সেই ছাড়টা না দেই, তখনই তর্ক-বিতর্ক হয়। উল্টো আমাদের নামে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়। এখন ভিজ্যুয়াল প্রমাণসহ যে মামলাগুলো হচ্ছে, এতে কোনও ঝামেলা হচ্ছে না। কেউ চ্যালেঞ্জ করলে আমরা প্রমাণ দেখাচ্ছি। সেটা তারা অস্বীকার করতে পারছেন না।
ট্রাফিক পুলিশের মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক সফলতা আসছে বলে দাবি করেছেন ট্রাফিক ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার আকরাম হাসান। তিনি বলেন, ‘মামলায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রমাণ রাখায় এখন সফলতা আসা শুরু হয়েছে। আগের তুলনায় উল্টোপথে চলাচল কমেছে, অবৈধ পার্কিংও কমেছে। এগুলো ভিডিও এভিডেন্সসহ মামলার ফল। আশা করি, আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করলে আইন ভাঙার প্রবণতা কমবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাতেও সফলতা আসবে।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘এখন প্রচুর ভিডিও মামলা হচ্ছে। অনেক সময় ড্রাইভার থাকে না বা গাড়ি অবৈধ স্থানে পার্কিং করে চলে গেছে, চলতি গাড়ি ট্রাফিক সিগন্যাল লঙ্ঘন করে চলে গেছে, ধরা যায়নি। সেক্ষেত্রে ভিডিও ফুটেজ রাখা হয়। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের নোটিশ পাঠিয়ে ডাকা হয়। পরে তাদের সঙ্গে বসে কথা বলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
ভিডিও ফুটেজ ও ছবি রাখার কারণে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে অভিযুক্তদের ঝামেলা কম হচ্ছে বলে জানান ট্রাফিক পুলিশের এ কর্মকর্তা। তার ভাষ্য, এতে বাকবিতণ্ডা বা অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের ঘটনা কমবে। আগের তুলনায় তা কমছেও। কেননা, কোনও ডকুমেন্ট না রাখলে যে কেউ বলতে পারে, এটা হয়নি। কিন্তু প্রমাণ রাখা হলে অস্বীকার করার সুযোগ থাকছে না। বাংলা ট্রিবিউন