বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে নিয়ে ‘মওদুদকে সরে দাঁড়াতে বললেন খালেদা জিয়া’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তারা বলেছেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেল থেকে মওদুদের সরে দাঁড়ানোর খবরটি সত্য নয়।
আজ মঙ্গলবার (২৭ মার্চ) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে সভাপতির কক্ষে আইনজীবীরা এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, জয়নুল আবেদীন, এজে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সানাউল্লাহ মিয়া।
এ সংবাদের বিষয়ে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘পত্রিকায় একটি মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আমরা ছয়জন গিয়েছিলাম (কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে)। সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার, সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, আব্দুর রেজাক খান ও সম্পাদক এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। কেন এ সংবাদের বিরোধিতার কারণ কী? ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ একজন সিনিয়র আইনজীবী। নামকরা আইনজীবী, তার একটা সুনাম আছে। এ সংবাদ শুধু তারই সুনাম ক্ষুণ্ন হয়নি, বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত করার। আইনজীবী সমাজ আন্তরিকতার সঙ্গে, সমন্বয়ের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা রাজনৈতিক মামলা মোকাবিলা করছি।’
তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট বারে জয়লাভের পর আমরা ছয়জনের একটি আইনজীবী দল গিয়েছিলাম। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের অন্য প্রোগ্রাম ছিলো। সেজন্য তিনি আমাদের সঙ্গে যাননি। এখানে অন্য কোনো কারণ নেই। ছয়জনকে প্রথমে অভিনন্দিত করেছেন (সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বানে জয়লাভেরজন্য) খালেদা জিয়া।’
‘সেখানে মামলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের বলেছেন নিজেরা যেভাবে কো অর্ডিনেট করছেন সেভাবে চালিয়ে যান। তিনি (খালেদা জিয়া) অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া আইনি মোকাবিলা করে তাকে মুক্ত করবো সেটা তিনিও বিশ্বাস করেন। আমরা বলেছি সরকার যতই চেষ্টা করুক না কেন আপনাকে বেশিদিন রাখতে পারবে না।’
সংবাদটি দেখিয়ে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘নিউজটি খুবই দুঃখজনক। মওদুদকে সরে দাঁড়াতে বললেন খালেদা জিয়া। কাকে বললেন? এই সাংবাদিককে বললেন? যে আমি নির্দেশ নিচ্ছি যে মওদুদকে সরে দাঁড়াতে বলেন। আমরা সবাই উপস্থিত ছিলাম। আমাদের সঙ্গে তো এ রকম কথা হয়নি। এ রকম কোনো কথা বলেনই নি।’
‘এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চান সংশ্লিষ্ট পত্রিকায় প্রতিবাদ পাঠানো হবে কি? জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, এ সংবাদ সম্মেলনই প্রতিবাদ। এর মাধ্যমেই প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, ‘মওদুদ আহমদের সাবমিশন থেকে অনেক কিছু আমাদের শেখার আছে। জুনিয়র আইনজীবীদের শেখার আছে। কখনও তিনি বিরক্ত হন না। এ রকম একজন প্রতিথযশা আইনজীবীকে খালেদা জিয়া কি বলতে পারেন আপনি এ মামলার মধ্যে থাকবেন না? এ সংবাদ মিথ্যা, বানোয়াট।’
খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সরকার ভেবেছিল বেগম জিয়াকে তারা জেলে নেবে। তারপর নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদে জ্বালাও-পোড়াও করবে এবং তারা এর অভিযোগে তাদের (বিএনপি নেতাকর্মীদের) জেলে ভরবে। কিন্তু তা হয়নি। এজন্য সরকার খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির লক্ষ্যে এ ধরনের নিউজ করিয়েছে।’
ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘সেদিন যারা বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম, সেদিন যারা সেখানে ছিলেন, আজ এই সংবাদ সম্মেলনেও তারা উপস্থিত আছেন। তাদের প্রত্যেকেই সিনিয়র আইনজীবী। তাদের মধ্যে জুনিয়র শুধু আমি ছিলাম। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, তিনি (খালেদা জিয়া) একথা বলেনি। সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি তথ্য দিয়ে এসব নিউজ করিয়েছে। খালেদা জিয়ার মামলার ক্ষেত্রে আমরা আইনজীবীরা একত্রিত থাকবো। এক্ষেত্রে কোনও আপস চলবে না।’
সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মামলায় সামগ্রিকভাবে যারা আছি, তারাই এ মামলা পরিচালনা করবো।’
এর আগে মঙ্গলবার সকালে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি একজন সিভিল প্র্যাকটিসনার (দেওয়ানি মামলার আইনজীবী)। বেগম জিয়ার মামলাটি ক্রিমিনাল মামলা (ফৌজদারি)। এ ধরনের মামলায় আমি আগেও প্র্যাকটিস করিনি, এখনও করি না।’
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৫ মার্চ খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে গিয়েছিলেন তার আইনজীবীরা।
উল্লেখ্য, দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার বিরাত দিয়ে উক্ত সংবাদটি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমও প্রকাশ করেছিল। বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।