তানজিম আল ইসলাম: প্রায় সময়ই ৪২০ বা ‘ফোর টুয়েন্টি’ বলে অনেককে অপবাদ দিতে দেখা যায়। কিন্তু এটি এসেছে আইনের এক ধারা থেকে। দণ্ডবিধির ৪২০ ধারা। এ ধারায় প্রতারণা এবং প্রতারণার শাস্তি নিয়ে বলা হয়েছে।
কী করলে হবে প্রতারণা
সাদামাটা অর্থে কেউ কারও সঙ্গে কোনো বিষয়ে যদি যেকোনো ধরনের মিথ্যার আশ্রয় নেয় এবং কোনো প্রতিশ্রুতি ভেঙে ফেলে, সেক্ষেত্রে প্রতারণা বলা হলেও আইন অনুযায়ী প্রতারণার সংজ্ঞা কিছুটা ভিন্ন। আইন অনুযায়ী যে ব্যক্তি, কাউকে ফাঁকি দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধুভাবে কোনো ব্যক্তির কাছে কোনো সম্পত্তি প্রদানে বা রাখতে প্ররোচিত করে, তাহলে হবে প্রতারণা। ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতারিত ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা তা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করে। যার ফলে ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে সেটি প্রতারণা হবে। যদিও আইনে আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
প্রতারণার আবার রকমফের আছে। যেমন ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে প্রতারণা, জালিয়াতি করে প্রতারণা, মিথ্যা পরিচয় প্রদান করে প্রতারণা, বিয়ে নিয়ে প্রতারণা প্রভৃতি। আলাদা আলাদা প্রতারণার অভিযোগে আলাদা আলাদা শাস্তি নির্ধারিত আছে। সাধারণত দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় মামলা বেশি হতে দেখা যায়। এ ধারায় শাস্তি সর্বোচ্চ ৭ বছর এবং পাশাপাশি অর্থদণ্ডেরও বিধান আছে।
আইনের আশ্রয় কীভাবে নেবেন
যেকোনো কারণে প্রতারণার শিকার হলে কিংবা চাকরির নামে কোনো প্রতারণার শিকার হলে আইনের আশ্রয় খুব সহজেই নিতে পারেন। আপনি দায়ী ব্যক্তি বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করতে পারেন। প্রতারণার পাশাপাশি বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগও আনা যায়। ক্ষেত্রবিশেষে দেওয়ানি আদালতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন। তবে আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে যথেষ্ট প্রমাণাদি থাকা লাগবে। যেমন কোনো লিখিত চুক্তি, কোনো রসিদ—এসব বিষয়। তাই এ দলিলগুলো সংরক্ষণ রাখা জরুরি। বিয়ের নাম করে যদি কেউ প্রতারণামূলকভাবে সংসার করে, এ ক্ষেত্রে আইনের আশ্রয় নেওয়া যাবে।
দেশ–বিদেশে চাকরির নাম করে টাকা দেওয়ার সময় টাকা লেনদেন-সংক্রান্ত চুক্তি ভঙ্গ করলেও প্রতারণার অভিযোগ আনা যাবে।
থানায় এজাহার দায়ের করে মামলা করা যায় অথবা আদালতে সরাসরি মামলা দায়ের করা যায়। এ মামলা দায়ের করতে হয় মুখ্য বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বা মহানগর এলাকা হলে মুখ্য মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। তবে ব্যবসা–সংক্রান্ত লেনদেনে প্রতারণার অভিযোগ অনেক সময় না–ও টিকতে পারে। উচ্চ আদালতের কিছু রায়ে তা বলা হয়েছে।
যা জানা দরকার
আমাদের দেশে চাকরি নিয়ে প্রতারণার ঘটনা অনেক বেশি ঘটতে দেখা যায়। তাই কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির সাক্ষাৎকারের সময় বা পরে চাকরিতে যোগদান করার কথা বললে হুট করেই চাকরিতে যোগ দেওয়া ঠিক হবে না। চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে প্রথমেই জেনে নিন ওই প্রতিষ্ঠানটি আইনগতভাবে স্বীকৃত কি না। প্রতিষ্ঠানটির যথাযথ নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স আছে কি না। বেতন-ভাতা সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানুন, চাকরির ধরন সম্পর্কে জেনে নিন। নিয়োগপত্র গ্রহণের সময় তাতে শর্তাবলি কী আছে, ভালোভাবে দেখে নিন। ব্যক্তিগত লেনদেনের ক্ষেত্রে একটা লিখিত চুক্তি করে রাখুন। যতই কাছের আত্মীয় হোক না কেন, লিখিত চুক্তি করে টাকাপয়সার লেনদেন করা উচিত। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রমাণাদি রাখা জরুরি।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।