সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগে নীতিমালা প্রনয়ণের দাবি জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি। একইসঙ্গে বিচারপতি নিয়োগের সময় হাইকোর্টের রায় মানতেও পরামর্শ দিয়েছেন সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট বার অডিটোরিয়ামে সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন এ কথা বলেন।
আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি সরকার হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগে নতুন বিচারপতি নিয়োগ দেবেন।
এমতাবস্থায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করে হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগের জন্য আমরা দাবী জানাচ্ছি। এর ব্যত্যয় হলে কঠোর পদক্ষেপ নিতে আমরা বাধ্য হব।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল হাইকোর্টের এক রায়ে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, কার্যকর এবং বস্তুনিষ্ঠ করার প্রয়োজনের সাতটি যোগ্যতা নির্ণায়ক উল্লেখ করা হয়। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীকে অবশ্যই সংবিধানের অষ্টম অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির প্রতি অকৃত্রিম আনুগত্য থাকতে হবে এবং মেধা সম্পন্ন, পেশাগত দক্ষতা, সুক্ষ্ম বিচারশক্তি ও ন্যায়পরায়ণতা সম্পন্নদেরই কেবল সুপারিশ করা যাবে।
‘তাছাড়া একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে সকল যোগ্যতা সম্পন্ন ইচ্ছুক প্রার্থীদের সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদনের সুযোগ প্রদান করতে হবে।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি সরকার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের নতুন বিচারপতি নিয়োগের পাঁয়তারা করছেন। আমরা বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের নীতিমালা বা নিয়োগের ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের নির্দেশনা সম্পর্কে কিছুই বলেননি।
‘এমতবস্থায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ও সর্বোপরি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি অনতিবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের ৯৫(২) অনুসারে হাইকোর্টের গত বছরের ১৩ এপ্রিলের রায়ের আলোকে বিচারক নিয়োগের নীতিমালা প্রণয়ন করে নতুন বিচারপতি নিয়োগের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সবসময় আইনের শাসন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার দায়িত্ব অতীত থেকেই পালন করে আসছে।
‘বাংলাদেশের মানুষ সর্বোচ্চ আদালতের বিচার পাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন। সেজন্য দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকতে হবে,’ যোগ করেন জয়নুল আবেদীন।
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে দলবাজদের নিয়োগ চায় না জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিচারপতি হিসেবে দলবাজদের নিয়োগ আমরা দেখতে চাই না। সরকারকে সতর্ক করে বলতে চাই, যদি বিচারপতি হিসেবে দলবাজদের নিয়োগ দেয়া হয় তাহলে সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সকল আইনজীবীরা প্রতিবাদ শুরু করবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমিতির সহ সভাপতি উম্মে কুলসুম রেখাসহ বিএনপিপন্থী সদস্যরা।