নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরা পারভীনের বিরুদ্ধে পেনাল কোড ৫০০/৫০১ ধারা মোতাবেক ১০ কোটি টাকার মামলা দায়ের করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুর আমির লিটু। রবিবার (১ এপ্রিল) সকালে নড়াইল, লোহাগড়া বিজ্ঞ আমলী আদালতে মামলাটি দায়ের করেন তিনি। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট নয়ান বড়াল শুনানী শেষে মামলাটি খারিজ আদেশ দেন। এর আগে ইউএনওকে হত্যার হুমকির অভিযোগে উপজেলা চেয়ারম্যানের নামে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও লোহাগড়া আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফয়জুর আমির লিটুর বিরুদ্ধে ইউএনও মনিরা পারভীন লোহাগড়া থানায় একটি জিডি (নং-১৫৭৬) দায়ের করেন। জিডিতে ইউএনও উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটুকে কুখ্যাত সন্ত্রাসী বিকাশ প্রকাশ বাহিনীর সহযোগি, ডাকাত ও পেশাদার খুনী আখ্যায়িত করেন। এছাড়া জিডিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ সালের ২৯ জুন ভুয়া প্রকল্পের বরাদ্দের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান লিটু ইউএনও’র নিকট স্বাক্ষর আনতে যায়। যা ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক বলে মামলার আরজিতে উল্লেখ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান লিটু। দায়েরকৃত জিডিতে মানহানিকর এবং সামাজিক মর্যাদা ও সম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে তাঁর। এতে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতা লিটুর রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন ও মান-সম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে। ফলে লিটুর ১০ কোটি টাকার মান সম্মানের হানি ঘটেছে। বিধায় মানহানির অভিযোগ এনে রোববার সকালে আদালতে মামলা দায়ের করেন তিনি। দুপুরে আদালতের বিচারক বিষয়টি পর্যালোচনা পূর্বক তা খারিজ করে দেন।
এ প্রসঙ্গে লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরা পারভীন বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুর আমির লিটু অবৈধভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত দুর্নীতি করে খাচ্ছিলেন। আমি এ উপজেলায় যোগদানের পর তার দুর্নীতিতে ভাটা পড়েছে। আমাকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। আমি ইতিমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে আমাকে হুমকি দেয়ার ব্যাপারে থানায় একটি জিডি করেছি। সেটি এনএসআইয়ের অধীন বর্তমানে তদন্তাধীন আছে। যেহেতু জিডিটি তদন্তাধীন আছে, সেহেতু আমার বিরুদ্ধে আদালতে দায়ের করা মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন বলে আমি জানতে পেরেছি।’
প্রসঙ্গত, লোহাগড়া উপজেলা চেয়ারম্যান লিটু ২০১৭ সালের ২৯ জুন কিছু ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে বরাদ্দ নিয়ে আসেন এবং ওই বিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্বাক্ষর করতে বলেন। কিন্তু ভুয়া প্রকল্প হওয়ায় ইউএনও স্বাক্ষর না করায় ৩৯ লাখ টাকা ফেরত চলে যায়। এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করে টাকা আত্মসাত করায় ইতিমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের মামলায় আসামি হয়েছেন। এরপর থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান ইউএনওকে প্রকাশ্যে হুমকি দেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে এবং টেলিফোন ও মোবাইলে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। চেয়ারম্যানের অব্যাহত হুমকি এবং টেলিফোনের আলাপচারিতায় তিনি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে ইউএনও থানায় জিডি দায়ের করেছেন।
নড়াইল থেকে কাজী মেসবাহউর রহমান (সুমন)/ ল ‘ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডট কম