সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছেন কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
আজ সোমবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে আন্দোলনকারীদের অন্যতম সমন্বয়ক হাসান আল মামুন দোয়েল চত্বরে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দোয়েল চত্বরে পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে আসেন মামুন।
তিনি বলেন, আমাদের ২০ সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে যাচ্ছে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সঙ্গে কথা বলতে। আলোচনা শেষে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
পুলিশের সঙ্গে আলাপের বিষয়ে মামুন বলেন, আমরা পুলিশকে বলেছি টিএসসিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবো। তারা যেন আমাদের ওপর হামলা না করেন। পুলিশ এতে রাজি হয়েছে।
কথা বলতে আসা মামুনসহ আরেকজনের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্রের ছবি তুলে রাখে পুলিশ। সেখানে নিয়োজিত কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষার্থীরা যদি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন না করে ভাঙচুর করে, তাহলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে এবং এই দু’জনের বিরুদ্ধে মামলা দেবে।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেবির সামনে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনের সমন্বয়ক রাশেদ খান বলেন, গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের মুক্তি না দিলে এবং হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের বিচার না করলে বিকেল থেকে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত সারাদেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
এরপর দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ঘিরে চারটি রাস্তাই বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা। এতে টিএসসি থেকে শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও নীলক্ষেত-নিউমার্কেটমুখী চারটি রাস্তাতেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিতে থেমে থেমে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। এরপর মামুন পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে দোয়েল চত্বরে আসেন।
কোটা সংস্কারের দাবিতে রোববার (৮ এপ্রিল) বিকেলে গণপদযাত্রা কর্মসূচি শুরু করেন ঢাবি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), ঢাকা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে তারা অবরোধ করেন শাহবাগ মোড়। রাস্তা থেকে তাদের হটিয়ে দিতে রাতে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এসময় বেশ কিছু শিক্ষার্থী আহত হন।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ তুলে মধ্যরাতেই রাস্তায় নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ছাত্রীরা। এতে উত্তাল হয়ে পড়ে গোটা ক্যাম্পাস। এসময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক শাহবাগে এসে সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু এরমধ্যেই ঢাবি ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবনে ওই হামলা চালানো হয়। সেসময় দু’টি মাইক্রোবাস ও মসজিদের সামনে মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগও করা হয়। পরে আন্দোলনকারীদের হটিয়ে দিতে আরও কড়া অবস্থানে যায় পুলিশ। আন্দোলনকারীরা দোয়েল চত্বরে অবস্থান নিলে সেখান থেকেও তাদের হটিয়ে দেওয়া হয়। সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিরুদ্ধে মিছিল করে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ।
অবশ্য কোটা সংস্কার দাবিতে ঢাকার বাইরে আন্দোলন করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও। আন্দোলনকারীরা কোটার সংস্কারের পাশাপাশি ঢাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার দাবিও করছেন।