সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ সোমবার (৯ এপ্রিল) মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
কোটা সংস্কারের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। সুনির্দিষ্ট ঘোষণা ছাড়া আন্দোলন থেকে সরে না আসার কথাও জানিয়েছেন তারা। একইদিন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোটা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন অনির্ধারিত কিছু আলোচনা হয়েছে। সরকারি চাকরিতে কোটা থেকে প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাবীদের নিয়োগের সিদ্ধান্তের কথাও তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
বিগত তিনটি বিসিএস থেকে কোটার শূন্যপদে মেধাবীদের নিয়োগের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা বিগত তিন বিসিএসের জন্য সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধা বা অন্য কোটাগুলো যদি পূরণ করা সম্ভব না হয় তাহলে সেটা মেধা তালিকা থেকে যারা শীর্ষে অবস্থান করবে তাদের দিয়ে পূরণ করা হবে। সেটিই পূরণ করা হয়েছে।
৩৩তম বিসিএসে ৭৭ দশমিক ৪০ শতাংশ, ৩৫তম বিসিএসে ৬৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ৩৬তম বিসিএসে ৭০ দশমিক ৩৮ মেধা তালিকা থেকে এসেছে।
বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বর্তমানে মেধা কোটা ৪৫ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, মহিলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৫ শতাংশ এবং ক্ষেত্র বিশেষে জেলা কোটা ১০ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী কোটা ১ শতাংশ রয়েছে।
কোটা সংস্কারের চলমান আন্দোলনের মধ্যে মন্ত্রিসভায় এ নিয়ে কোনো পরিবর্তনের চিন্তা আছে কিনা- প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, না, আজ কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়।
কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- প্রশ্নে তিনি বলেন, আলোচনা কিছুটা… অনির্ধারিত আলোচনা তো হয়, এরকম কিছু। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হলো এটার স্টেক হোল্ডার। তারা বিষয়টা একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে, দেখে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করবে।
কোটার শূন্যপদে মেধাবীদের নিয়োগের সিদ্ধান্তের ফলে মেধাবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
গত ৬ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খানের স্বাক্ষর করা এক আদেশে বলা হয়, সব সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার কোনো পদ যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা সম্ভব না হইলে সেসব পদ মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ করা হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ৫ এপ্রিল কোটা বহাল রেখেই কোটা এবং কোটার শূন্যপদে মেধাবীদের নিয়োগের বিষয়ে স্পস্ট ব্যাখ্যা দিয়েছে।
এটির আরও ব্যাখ্যা দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আসলে এখানে কোটার মাধ্যমে মেধা কখনও অবহেলিত হয় না। যেমন, নারী কোটায় যদি ১০টি পদ থাকে, ১০টির মধ্যে তারাই আসবে যারা লিখিত পরীক্ষা এবং অন্য পরীক্ষায় ভালো করেছে। অর্থাৎ নারীদের মধ্য থেকে যারা মেধা তালিকায় ভালো থাকবে তারাই আসবে। এমন না যে মেধাবীরা পেছনে পড়ে যাচ্ছে। জেলার ক্ষেত্রেও তাই, জেলার মধ্যে যারা ভালো করবে তারা আসবে। প্রতি ক্ষেত্রে মেধার মধ্যে যারা অগ্রসর তারাই আসবে, কোটার দ্বারা কিন্তু কারও মেধা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার ফলে কোটা আর রিজার্ভ থাকছে না দাবি করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মোডিফাই করেছে, অর্থাৎ পদ না পাওয়া গেলে মেধা তালিকায় যারা উপরের দিকে তাদের দিয়ে পূরণ করা হবে, এটা তো একটা সংস্কার। এটা তো রিভাইজ করা হয়েছে।
মন্ত্রিসভায় কোটা সংস্কারে কোনো সিদ্ধান্ত আছে কিনা- প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আজকের সিদ্ধান্ত হচ্ছে আমাদের কনস্টিটিউশনাল অব্লিগেশন। কনস্টিটিউশনে বলা আছে, যারা অনগ্রসর তাদের সামনে নিয়ে আসার জন্য কোটা সিস্টেম প্রবর্তন।
তিনি বলেন, সংস্কার অলরেডি একটা হয়ে গেছে। কোটা আইন দিয়ে হয় না, সার্কুলার দিয়ে হয়। নতুন যে সংশোধন নিয়ে আসা হয়েছে, তাতেই মেধাবীরা যথেষ্ট সুবিধা পাচ্ছে, এ বিষয়ে আমাদের ধারণা আছে।
প্রথম ও দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগে পরিপ্রত্রটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।