অর্পিত সম্পত্তি ভোগ দখলের আইনের খসড়া নিয়ে সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস। তবে তাৎক্ষণিক জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার মাধ্যমে আশ্বাস দিয়ে বলেছেন ‘খ’ তফসিলের সম্পত্তির বিষয়ে রিট করার সুযোগ থাকলেও রিট চলবে না। এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত সার্কুলার আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
রোববার (৮ এপ্রিল) সংসদ অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় বিষয়টি উত্থাপন করে পঞ্চানন বিশ্বাস পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অর্পিত সম্পত্তি সরকারি জিম্মা থেকে ব্যক্তি মালিকানায় দেওয়া হচ্ছে। অর্পিত সম্পত্তি ক্রয় করে সেখানে বাড়িঘর স্কুল কলেজ ও শিল্প কারখানা করা যাবে। আর সরকারি কর্মকর্তারা জোট বেঁধে এই সম্পত্তি ক্রয় করতে পারবেন। এসব বিধান রেখে অর্পিত সম্পত্তির বিধিমালা প্রস্তুত করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
অর্পিত সম্পত্তির পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারের দখলে থাকা অর্পিত সম্পত্তির পরিমাণ দুই লাখ ২০ একর। এসব সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে এরইমধ্যে আদালতে এক লাখ ১৯ হাজার হয়েছে।
পঞ্চানন বিশ্বাস বলেন, অর্পিত সম্পত্তির বিষয়ে আমরা জানি, যে যত বেশি প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিসিআর ((ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদ) কাটতে পারতো, সেই তত বেশি সম্পত্তির মালিক হতো। এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অর্পিত সম্পত্তি দুই ভাগে ভাগ করে। ‘ক’ তফসিল ও ‘খ’ তফসিল। সেখানে বলা ছিল ‘ক’ তফসিলের সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা হবে, সেখান থেকে যার পক্ষে রায় আসবে সেই জমির ভোগ দখল করবে। আর ‘খ’তফসিলে কোনো মামলা হবে না। যার সম্পত্তি সরাসরি তার দখলে চলে যাবে। সে রেকর্ড পাবে খাজনা দেবে।
এ সংসদ সদস্য বলেন, বর্তমানে ভূমি অফিসে গেলে ‘খ’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তি রেকর্ড হচ্ছে না, খাজনাও দিতে পারছে না। আর ‘ক’ তফসিলভুক্ত যেসব সম্পত্তির মামলা হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হয়েছে সেগুলোও রেকর্ড হচ্ছে না।
তিনি বলেন, এদেশে সেসব ভূমি অর্পিত সম্পত্তি বলে আখ্যায়িত হয়েছিল, সেটা কেবল ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নয়। প্রধানমন্ত্রীর দাদির নামেও পাকিস্তান আমলে অর্পিত সম্পত্তি হয়েছিল।
উদাহরণ দিয়ে পঞ্চানন বিশ্বাস বলেন, যদি ৫ ভাই থাকেন তাহলে দেখা গেছে ৪ ভাই এ দেশ ত্যাগ করেছেন। কিন্তু তাদের ২০ বিঘা সম্পত্তি থাকলে সবটুকুই অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে। এতে ওই পরিবারে যে সদস্য আছেন, তিনি আর ওই সম্পত্তির লিজ পাচ্ছে না। তারা তাদের জমি ভোগ করতে পারছেন না।
পঞ্চানন বিশ্বাসের এসব বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগে ‘ক’ তফসিল আর ‘খ’ তফসিল নিয়ে একটা বিভ্রান্ত ছিল। এই বিভ্রান্তি দূর করতে আমরা নতুন আইনের খসড়া করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আগে ‘খ’ তফসিলভুক্ত ভূমি দখল একেবারেই বন্ধ করে দেওয়ার পর্যায়ে ছিল। নতুন বিধিতে উল্লেখ করে দিয়েছি ‘খ’ তফসিলভুক্ত ভূমি রিট করার সুযোগ থাকলেও রিট চলবে না। এই কথা বলে একটি সার্কুলার ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। অচিরেই এটা বিতরণ শুরু হবে। কাজেই এ নিয়ে আর বিতর্ক থাকবে না।