কাঠামোগত নির্যাতনের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীকে বিতাড়িত করার ঘটনা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) আওতায় আসবে কিনা সে বিষয়ে রুল জারির আহ্বান জানানো হয়েছে। ঘটনাটিকে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অভিহিত করে সোমবার এই আবেদন করেন আদালতের কৌঁসুলি ফাতাও বেনসুউদা।
বিষয়টি নিয়ে আদালত নির্দেশনা দিলে লাখ লাখ রোহিঙ্গার ওপর নির্যাতনের তদন্ত ও বিচারের কাজ সহজ হবে। যদিও মিয়ানমার সহায়তা করবে বলে মনে হয় না। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে পুলিশ চেকপোস্টে সহিংসতার পর বহুদিন ধরে চালানো রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যা ও ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছে। একে নিধনযজ্ঞ বলেছে যুক্তরাষ্ট্রও।
আবেদনে ফাতাও বেনসুউদা বলেছেন, ‘ঘটনাটির তদন্ত করা ও প্রয়োজনে বিচার করা আদালতের এখতিয়ারভুক্ত কিনা সে বিষয়ে এটা সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন, কোনও বিমূর্ত প্রশ্ন নয়।’ আদালতের এখতিয়ার আছে কিনা বিষয়টি জানতে চাওয়ার কারণ হলো বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য হলেও মিয়ানমার এর সদস্য নয়।
বেনসুউদা যুক্তি দেন, বিতাড়িত করে দেশ ছাড়তে বাধ্য করার মতো অপরাধকে আইসিসি’র আওতায় আনা হলে তার বৈধ নীতিমালা প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তবে তিনি বিতাড়িত করার অপরাধের সংজ্ঞা নিয়ে অনিশ্চয়তা ও আদালতের এখতিয়ারের সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও স্বীকার করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে এমন আবেদন এবারই প্রথম করা হলো। তিনি আদালতে এ ঘটনায় শুনানি করে তার ও অন্যান্য পক্ষের যুক্তি-তর্ক শোনার আহ্বান জানান। আদালতের বিচারক অ্যান্থিনিও কিসিয়া-এমবি মিনদুয়া আবেদনটি বিবেচনার জন্য সম্ভাব্য উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তাদের দাবি সরকারি বাহিনীর ওপর হামলাকারী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে আইনগত অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তবে মিয়ানমারের অনেক বাসিন্দাই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী বলে মনে করে থাকে।