যে সমস্ত বিষয়ে লিখতে ইচ্ছে করে শুধু ওই সমস্ত বিষয়েই লিখি। রাজনৈতিক ধারাভাষ্য দেয়া কলামিস্ট হওয়ার কোন ইচ্ছে নেই। কেবলমাত্র আইনী বিষয় হলেই মাথা ঘামাই। কোটা এখন একটি রাজনৈতিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই একটু সাবধানে কথা বলা ভালো।
সবাই বলছিলেন সংস্কারের কথা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অভিমানে পুরো ব্যাপারটাই ঝেড়ে দিলেন। সংবিধান মতে কোটা একটি সুবিধা, অধিকার না। তাই কোটার জন্য রিট চলে না। তবে আগে থেকে ভোগ করে আসা সুবিধা কখনো কখনো অধিকার হয়ে দাড়ায়। তখন আবার বাতিল করাকে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। সেক্ষেত্রেও মনে হয় আমাদের বেশী দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই। কারণ –
১) কোটা এখন ভীষণ অজনপ্রিয়। আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে আদালত ও আইনজীবীরা সাধারণত অজনপ্রিয় বিষয়-আশয় নিয়ে বেশী ঘাটাঘাটি করতে চান না। জনপ্রিয়তা সন্ধানী “রিট মাস্টার”রা তো একেবারেই নন।
কোটার ভেতর বিশেষত মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি নাতনি কোটা ভীষণ অজনপ্রিয় হয়ে দাড়িয়েছে। মনে আছে, বছর দুয়েক আগে আইন অনুষদের অফিসে এক অভিভাবককে ঝাড়ি দিয়েছিলাম। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সনদ আনেন, কথিত আরেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের কাছ থেকে। তারপর আবার ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী যে মুক্তিযোদ্ধার মেয়ের ঘরের নাতি সে মর্মে একটি চেয়ারম্যান সনদ আনেন যেটি এক পলক দেখেই বুঝেছিলাম আন্দরকিল্লা থেকে কালার প্রিন্ট নেয়া। জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইউনিয়ন পরিষদের মূল প্যাড কই।’ বললেন, ‘এটাই মূল প্যাড, আপনার ভুল হচ্ছে!’ তারপর বললাম, ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মূল সনদ কই?’ বললেন, ‘শিক্ষার্থীর বাবা চিকিৎসার জন্য ভারত গেছেন, আসলে দেবেন।’ ড ফারুক স্যারকে বললাম, ‘কি করবেন দেখেন স্যার।’ স্যার বললেন, ‘আপাতত নিয়ে নাও। নইলে আমাকে রাজাকার বলবে। পরে দেখা যাবে।’ পরে আর কিছু দেখা গিয়েছিল কিনা জানি না।
২) চলমান আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে মহামান্য উচ্চ আদালতের একটি বেঞ্চে রিট নিয়ে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। মামলা দায়েরকারী শিক্ষার্থীরা “aggrieved” নন বলে আদালত রিট বাতিল করে দেন। যুক্তি ছিল শিক্ষার্থীরা তখনো বিসিএস দেন নি। তাই রিট প্রিম্যাচিউরড। যুক্তিটি আমি মানি কি মানি না সেটি অন্য ব্যাপার। কিন্তু আশা করতে পারি এবার বাতিল করাকে চ্যালেঞ্জ করতে চাওয়া কেউ আগে বিসিএস না দিয়ে রিট করলেও সেটি একই নিয়মে খারিজ হবে। আর বিসিএস দিয়ে রিট করলে তো বাতিল হতেই হবে। কারণ কোটা নেই জেনেই তুমি পরীক্ষা দিছ, এখন আবার “কোটা পাওয়ার মৌলিক অধিকার” এলো কোত্থেকে? আবার তৃতীয় একটি পরিস্থিতি হতে পারে, ইতোমধ্যেই কোটা পেয়ে যাওয়া কেউ করতে চাইলে সেটি সম্ভব কিনা। উত্তর হচ্ছে, না। কারণ তার কোন ক্ষতি-ই হয় নি।
কোটা নিয়ে করা রিটটি বাতিল করার সময় আমাদের উচ্চ আদালত যে যুক্তিগুলো দিয়েছিলেন সেগুলো বেশ কনফিউজিং। তবে এটুকু আশা করি যে, কোটা নিয়ে মাথা ঘামাতে উচ্চ আদালতের যে অনীহা আমরা ওই রিটে দেখতে পেয়েছি সেটি বর্তমান পরিস্থিতিতে আরো বাড়বে। ফলে কোটা বাতিল বা সংস্কার এখন মুলত রাজনৈতিক ইস্যু।
লেখক- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জসিম আলী চৌধুরী’র ফেইসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগ্রহ।