কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে দায়ের করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের চার মামলা দুদিনের মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এর মধ্যেই এ দাবি পূরণ না হলে ফের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আজ সোমবার (১৬ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন ও যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান। এ সময় যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল্লাহ নূর ও ফারুক আহমেদসহ কয়েকশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে একটি কুচক্রী মহল জামায়াত-শিবির পরিচয় দিতে ওঠেপড়ে লেগেছে। এটি পুরোপুরি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য এটি করা হচ্ছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্মটির নেতারা বলেন, এ ধরনের সংবাদ প্রচার করা হলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব। আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমরা যদি এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলি, পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না।
ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছেন। তারা ইতিবাচক পেয়েছেন বলেই আমাদের আন্দোলনে কোনো বাধা দেয়নি। প্রধানমন্ত্রীও আমাদের দাবি মেনে নিয়েছেন। কিন্তু দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য আমাদের ভিন্ন পরিচয় দিয়ে আন্দোলন ভিন্নপথে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে।
সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘ দৈনিক ইত্তেফাকে আমাকে জামায়াত-শিবির পরিচয় দিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সেখানে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে সূর্যসেন হলের ৫০৫ নম্বর রুমে থাকতাম। কিন্তু আমি ২০১৩ সালে সেখানে থাকা শুরু করি। প্রতিবেদনে আমার বাবার নামও ভুল লেখা হয়েছে। পুরো প্রতিবেদনই মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভরা।
সংগঠনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা। এবং আমি মহসীন হলে ছাত্রলীগের সহসভাপতি। আমি সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। কেউ যদি আমাকে সন্দেহ করে থাকেন, তা হলে আমার পরিবারে খবর নিতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলন থেকে দৈনিক ইত্তেফাককে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাদের নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
সংগঠনের নেতারা বলেন, আজ বিকাল ৫টার মধ্যে ইত্তেফাক পত্রিকা যদি প্রতিবেদন প্রত্যাহার না করে, মঙ্গলবার থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পত্রিকা বর্জন করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ৮ এপ্রিল থেকে পাঁচ দিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেন।
পরে ১২ এপ্রিল জাতীয় সংসদের অধিবেশনে কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করে সব চাকরিতে শতভাগ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দেন।
এ আন্দোলনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা, গাড়ি পোড়ানো ও পুলিশের ওয়াকিটকি ছিনতাইয়ের অভিযোগে চারটি মামলা করা হয়। আগামী ১৭ মে আদালতে এসব মামলার প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে।