সরকারের জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা লিগ্যাল এইড কমিটির মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলায় ২০১২ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত কারাগারে আটক ৫৩ হাজার ৪৭৭ জন আইনি সহায়তা পেয়েছেন।
পাশাপাশি, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, শ্রমিকের অধিকার ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি, অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের মামলা পরিচালনা এবং টোল-ফ্রি জাতীয় হেল্পলাইনের মাধ্যমে তথ্য সেবা প্রদানেও সংস্থাটির উদ্যোগ সফলতা লাভ করেছে।
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সর্বমোট আইনি সেবা পেয়েছেন ৩ লাখ ৫২৬ জন। এর মধ্যে ৬৪টি জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির মাধ্যমে এই সহায়তা পেয়েছেন ২ লাখ ১ হাজার ১২৫ জন (১ লাখ ৩ হাজার ১৫৪ জন নারী, ৯৭ হাজার ৪৪২ জন পুরুষ এবং ৫২৯ জন শিশু)।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের অধীনস্থ জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
‘জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ এবং সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতিমালা/ প্রবিধান অনুসারে সংস্থাটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
একই সময়ে আইনগত সহায়তায় নিষ্পত্তিকৃত মামলার মোট সংখ্যা ৮০ হাজার ৮৬৫টি। এগুলোর মধ্যে দেওয়ানি ২৭ হাজার ৭২১টি, ফৌজদারি ৫২ হাজার ৫৪২টি এবং অন্যান্য মামলা ৬০২টি।
এসব তথ্য জানিয়ে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সহকারি পরিচালক (জ্যেষ্ঠ সহকারি জজ) কাজী ইয়াসিন হাবীব জানান, সংস্থার জেলা লিগ্যাল এইড অফিস বর্তমানে জনগলকে বিভিন্ন ধরনের আইনগত পরামর্শ দিয়ে থাকে। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত আইনগত পরামর্শ গ্রহীতার মোট সংখ্যা ৩০ হাজার ৯১০ জন। এদের মধ্যে নারী ১৮ হাজার ৭৬০ জন এবং পুরুষ ১২ হাজার ১৫০ জন।
তিনি জানান, এসব পরামর্শের মধ্যে ছিল-মোহরানা-খোরপোষ, নাবালকের অভিভাবকত্ব, বিবাহবিচ্ছেদ, পারিবারিক কলহ, নারী ও শিশু নির্যাতন, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, অপহরণ, ধর্ষণ, ভূমি বিরোধ, দলিল জালিয়াতি, ভুল রেকর্ড সংশোধন।
কাজী ইয়াসিন হাবীব বলেন, ‘বর্তমানে সরকারি সহায়তায় জাতীয় হেল্পলাইন ১৬৪৩০ টোল-ফ্রি নম্বরের মাধ্যমে আইনি তথ্য সেবা প্রদান করা হয়। প্রত্যেক কর্মদিবসে অফিস চলাকালীন সময়ে যে কেউ আইনি তথ্য সেবার জন্য এই টোল-ফ্রি নম্বরে ফোন করতে পারেন। ২৮ এপ্রিল’২০১৬ থেকে মার্চ’২০১৮ পর্যন্ত এর মাধ্যমে আইনগত তথ্য সেবা গ্রহণকারীর মোট সংখ্যা ২৫ হাজার ৮৮৭ জন। এদের মধ্যে নারী ৭ হাজার ৮৮৫ জন এবং পুরুষ ১৮ হাজার ৩ জন‘।
অন্যদিকে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে সংস্থার শ্রমিক আইনসহায়তা সেলের মাধ্যমে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ কোটি ২৫ লাখ ৮১ হাজার ১৮৯ টাকা আদায় করা হয়েছে। শ্রম আদালতে ৪৫৪টি মামলা দায়ের করা হয় এবং এর মধ্যে ১১৩টি নিষ্পত্তি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সুপ্রিম কোর্টেও লিগ্যাল এইড কমিটির মাধ্যমে জনগণকে আইনিপরামর্শ ও আইনগত সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
জ্যেষ্ঠ সহকারি জজ কাজী ইয়াসিন হাবীব বলেন, ‘কেউ যাতে আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য আইনগত অধিকার ও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হন, সেজন্য সরকারের এই জনবান্ধব উদ্যোগ। ইতোমধ্যেই জনগণ এই সেবার সুফলপাচ্ছে’।
সেবা প্রাপ্তির যোগ্যতা : অসমর্থ বা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ব্যক্তি যার বার্ষিক আয় সুপ্রিম কোর্টে আইনগত সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে দেড়লাখ (১ লাখ ৫০ হাজার) টাকা এবং অন্যান্য আদালতের ক্ষেত্রে একলাখ টাকার ঊর্ধ্বে নয়। কর্মক্ষম নন, আংশিক কর্মক্ষম, কর্মহীন বা বার্ষিক দেড়লাখ টাকার উর্ধ্বে আয় করতে অক্ষম বীর মুক্তিযোদ্ধা। যে কোনো শ্রমিক যার বার্ষিক গড় আয় একলাখ টাকার বেশি নয়।
এছাড়াও যে কোনো শিশু, মানব পাচারের শিকার যে কোনো ব্যক্তি, শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু, যে কোনো উপজাতি- ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির লোক, প্রতিবন্ধী, বিনা বিচারে আটক অস্বচ্ছল ব্যক্তি, এসিড দগ্ধ ব্যক্তি প্রভৃতি।