মামলায় অর্থের সম্পৃক্ততা ৫০ টাকা। এক ট্রাফিক সার্জেন্টকে ঘুষ দেয়ার অভিযোগে মামলাটি করা হয়। পুলিশ মামলাটি করলেও অপরাধ দুদকের সিডিউলভুক্ত হওয়ায় এর তদন্তভার চলে যায় দুদকের ওপর।
আর ‘অতি তুচ্ছ প্রকৃতির’ বিবেচনায় এ মামলা তদন্তে অনীহা প্রকাশ করে দুদক। ফলে আবার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তদন্ত শেষে চার্জশিটও দেয়া হয়।
কিন্তু পুলিশের দেয়া ওই চার্জশিট গ্রহণ না করে মামলাটি আবার দুদককে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। প্রথম দফায় তদন্ত শেষ করেছে পুলিশ।
এরপর দ্বিতীয় দফায় ১০ বছরের অধিক সময় পার হলেও মামলাটির তদন্ত অদ্যাবধি শেষ করতে পারেনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বর্তমানে দুদকের তদন্তাধীন সর্বনিু অর্থসম্পৃক্ত মামলা এটি। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ ধরনের তুচ্ছ তদন্তের ক্ষেত্রে দুদকের তদন্ত না করার আইনি ক্ষমতা থাকা উচিত।
দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, দুদকের সিডিউলভুক্ত যেসব অপরাধ আছে, সেসব অপরাধ অন্য কোনো সংস্থা তদন্ত করতে পারে না।
দুদকের সিডিউলভুক্ত অপরাধ কিন্তু ‘অতি তুচ্ছ প্রকৃতির’ মামলাগুলো যেন অন্য সংস্থা দিয়ে তদন্ত করানো যায়, সেজন্য আইন সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম।
তবে আইন মন্ত্রণালয় রিকমান্ড করলেও তা সংসদীয় কমিটি গ্রহণ করেনি। ফলে আইনটি আর হয়নি। ওই আইনটি হলে এ মামলাটি এত দীর্ঘদিন ঝুলে থাকত না।
তিনি আরও বলেন, অতি তুচ্ছ প্রকৃতির বিবেচনায় দুদক যখন এ মামলা তদন্তে অনীহা প্রকাশ করে অন্য সংস্থাকে তদন্তভার দিতে চিঠি দিয়েছিল তখনই উচিত ছিল মামলাটিতে অনীহা প্রকাশ না করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (এফআরটি) দেয়া। তাহলে বিচারকের পক্ষে সুরাহা করা সহজ হতো।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ঘুষ লেনদেনের ক্ষেত্রে টাকার অংকটা বিবেচ্য বিষয় নয়।
সেটাকে (অপরাধ) বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে দুদকের সব সময় মনে রাখতে হবে, তার (দুদক) জনবল সীমিত। তিনি বলেন, ওই ৫০ টাকার মামলার ক্ষেত্রে দুদক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল (তদন্ত না করার) তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঠিকই আছে।
অপরদিকে যেহেতু আইনে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সেহেতু দুদক এ তদন্তভার এড়াতে পারে না। এ মামলাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহারণ হতে পারে। এ ধরনের মামলা আসলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।
মামলার নথিপত্র ঘেঁটে জানা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন শিশুমেলা সিগন্যাল থেকে কল্যাণপুরের দিকে যাচ্ছিল একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো ১৩-১৬৮৫)।
ওই মাইক্রোবাসকে থামার জন্য সিগন্যাল দিলে চালক মো. কবির হোসেন মোল্লা তা অমান্য করেন। একটু এগোতেই মাইক্রোবাসটি জ্যামে আটকা পড়ে। জ্যামে থাকা অবস্থায় মোহাম্মদপুর ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট প্রদীপ কুমার সাহা ওই গাড়ির কাগজপত্র ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চান।
এতে গাড়ি থেকে নেমেই চালক জনসম্মুখে ওই সার্জেন্টকে ৫০ টাকার নোট (যার নম্বর খচ ৪৫৮৭৯৩৭) দিতে চাইলে সার্জেন্ট তাৎক্ষণিক ওই চালকের হাত ধরে ফেলেন।
২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৫০ টাকা ঘুষ দেয়ার অপরাধে গাড়িসহ ওই চালককে আটক করে মোহাম্মদপুর থানায় ওই সার্জেন্ট বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলার একমাত্র আসামি কবির হোসেন বরিশাল বাকেরগঞ্জ থানার সন্তোষদি গ্রামের মৃত সোবহান মোল্লার ছেলে। মামলার ৯ দিন পরই আদালত থেকে জামিন পান তিনি।
সর্বশেষ চলতি বছরের ২৭ মার্চ এ মামলার প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। ওই দিনও দুদক তা দাখিল করেনি। মামলার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৩ মে দিন ধার্য রয়েছে। এদিকে আদালতে হাজির না হওয়ায় ২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর আসামি কবির হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন। যুগান্তর