অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন ও নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অসমর্থ ২ লাখ ১ হাজার ১২৫ জনকে আইনজীবী নিয়োগসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহে সহায়তা প্রদান করেছে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা। এ ছাড়া বিচার প্রার্থী ও ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষদের আইনগত দাবি বা পাওনার প্রেক্ষিতে মধ্যস্থতার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ৮ কোটি ৩৫ লাখ ৯ হাজার ৪৫৪ টাকা আদায় করে দিতে সক্ষম হয়েছে সংস্থাটি।
আগামী ২৮ এপ্রিল, জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এসব তথ্য জানান। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘উন্নয়ন আর আইনের শাসনে এগিয়ে চলছে দেশ/লিগ্যাল এইডের সুফল পাচ্ছে সারা বাংলাদেশ।’ তিনি বলেন, আগামী ২৮ এপ্রিল সকাল ১০টায় দিবসটি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানসহ লিগ্যাল এইড মেলা ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উপলক্ষে জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সভা, সেমিনার, আলোচনা সভা, রক্তদান কর্মসূচি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর কার্যকর করা হয় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থাকে। এই সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দেশের ৬৪টি জেলায় জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে গঠন করা হয় জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি। জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির পাশাপাশি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এবং চৌকি আদালতসহ সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা সারা দেশে সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। এছাড়া দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শ্রমিকদের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে ঢাকার শ্রম আদালতে ও ২০১৬ সালে চট্টগ্রামস্থ শ্রম আদালতে শ্রমিক আইন সহায়তা সেল স্থাপন করে সেখানে সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব শ্রম আদালতে শ্রমিক আইন সহায়তা সেল স্থাপন করা হবে।
লিগ্যাল এইড অফিসগুলোকে কার্যকর, গতিশীল ও সেবাবান্ধব করতে সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজ পদমর্যাদার বিচারককে পদায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তারা আইনগত সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি বিনামূল্যে আইনগত পরামর্শ প্রদান এবং পক্ষগণের মধ্যেকার বিরোধ বা মামলা বিকল্প বিরোধ পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি করছেন। সরকারের উদ্যোগের ফলে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে ২ লাখ এক হাজার ১২৫ জনকে সরকারি খরচে মামলা দায়ের করতে আইনজীবী নিয়োগসহ প্রাসঙ্গিক সব ব্যয় নির্বাহে সহায়তা দেয়া হয়েছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসাররা পূর্ব বিরোধ এবং চলমান মামলায় মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত ৭ হাজার ৭৯৭টি বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ৬ হাজার ৯১৫ জনকে সরকারি আইনি সহায়তা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষগুলোর আইনগত দাবি বা পাওনার প্রেক্ষিতে মধ্যস্থতার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ৮ কোটি ৩৫ লাখ ৯ হাজার ৪৫৪ টাকা আদায় করে দিতে সক্ষম হয়েছে।
সরকারি আইনি সহায়তায় জাতীয় হেল্পলাইন ‘১৬৪৩০’ এর মাধ্যমে ৭ হাজার ৮৮৫ জন নারী ও ১৮ হাজার ৩ জন পুরুষকে সেবা দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত পারিবারিক, দেওয়ানি, ফৌজদারিসহ বিভিন্ন আইনগত বিষয়ে সর্বমোট ৩০ হাজার ৯৪৫ জনকে আইনগত পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ হাজার ৭৮০ জন নারী এবং ১২ হাজার ১৬৫ জন পুরুষ। এ সময় আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক ও জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক জাফরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।