বিচারাধীন মামলা বিশেষ করে যারা বিনাবিচারে কারাভোগ করছেন, তাদের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সরকার বদ্ধপরিকর। কেউ যেন বিচারহীন না থাকে তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখছে শেখ হাসিনা সরকার।
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০১৮ উপলক্ষে আজ শনিবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
আনিসুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা হচ্ছে বিনা বিচারে কেউ যেন কারাগারে আটক না থাকেন এবং মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তার এই নির্দেশনার আলোকে সব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ করে কারাবন্দিদের বিচার দ্রুততম সময়ে শেষ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যার পর থেকে ১৯৯৬ সালের আগ পর্যন্ত যেসব সরকার ক্ষমতায় এসেছিল তাদের বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তাই তারা শুধু জাতির পিতার দেওয়া সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করে নাই, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিল।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার দেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা প্রদানের জন্য ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ প্রণয়ন করেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় সরকার গঠন করলে ওই আইনের বাস্তবায়ন কার্যক্রমকে বেগবান ও ফলপ্রসু করার লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয় কতিপয় উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। কার্যকর করা হয় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থাকে। উক্ত সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দেশের ৬৪ জেলায় জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্ব গঠন করা হয় জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি। জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির পাশাপাশি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এবং চৌকি আদালতসহ সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করে সেখানে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। এছাড়া দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শ্রমিকদের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে শ্রমিক আইন সহায়তা সেল স্থাপন করে সেখানে সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
‘‘আইনগত সহায়তা নিতে সবার আগে দরকার জনসচেতনতা। সেজন্য প্রচারণা প্রয়োজন। কারণ অনেকেই নিরক্ষর। তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতেই এ দিবস,’ যোগ করেন আনিসুল হক।
এছাড়া কারাগারকে সংশোধনাগারে পরিণত করতে আধুনিক কারা আইন ও পরিবর্ধিত কারাবিধি প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘কারাবন্দিদের দুর্দশা লাঘবে আইনি কাঠামো তৈরি করা বর্তমান সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মসূচি। কারাবন্দিদের মামলা যথাসময়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে আইনগত সহায়তা দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় পুনর্বাসন প্রক্রিয়া গ্রহণেও আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।’
ষষ্ঠবারের মতো দিবসটি পালন করছে বাংলাদেশ। এবারের স্লোগান ‘উন্নয়ন আর আইনের শাসনে এগিয়ে চলছে দেশ, লিগ্যাল এইডের সুফল পাচ্ছে সারা বাংলাদেশ।’
আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক।
তিনি বলেন, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। সামর্থ্যবানরা নিজের খরচে আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন। কিন্তু অসমর্থ্যদের আইনগত সহায়তা দিতে ২০০০ সালে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন প্রণয়ন করা হয়। এরপর প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা। লিগ্যাল এইড অফিসারের মধ্যস্থতায় আইনি দীর্ঘসূত্রতা কমানো গেছে, এখন এর সুফল পাচ্ছে জনগণ।
আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক (সিনিয়র জেলা জজ) মো. জাফরোল হাছান বলেন, আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ কার্যকরের দিন অর্থাৎ ২৮ এপ্রিলকে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস’ ঘোষণা করেছে সরকার। এরপর থেকে প্রতিবছর ২৮ এপ্রিল জাতীয়ভাবে আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, রাজধানী ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান ছাড়াও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সভা, সেমিনার, আলোচনা সভা, রক্তদানকর্মসূচি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রাসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।