যুক্তরাষ্ট্রের যে রাজ্যগুলোতে এখনও মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তি বলবৎ আছে তার মধ্যে টেক্সাস অন্যতম। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যার দিক থেকেও শীর্ষে থাকা রাজ্যগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। আর এমন অন্তত ৩০০টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের চাক্ষুস সাক্ষী ছিলেন মিশেল লিয়নস নামে এক নারী।
মিশেল লিয়নস টেক্সাসের একটি পত্রিকার প্রতিবেদক ছিলেন। দীর্ঘ দিন সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এই নারী। টেক্সাসের বিচার বিভাগের একজন মুখপাত্র হিসেবেও কাজ করেন। সবমিলিয়ে দীর্ঘ ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে দেখেছেন অন্তত ৩০০টি। নিজের পেশার কারণেই এমন অভিজ্ঞতার স্বাদ নিতে হয়েছে মিশেলকে। আর সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ‘ডেথ রোঃ দ্য ফাইনাল মিনিট’ বই লিখে।
২২ বছর আগে প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে দেখেন মিশেল। জেভিয়ের ক্রুক নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুদন্ডের কার্যকরের পর নিজ জার্নালে তিনি লিখেছিলেন, বিষয়টির সম্পর্কে আমি স্বাভাবিক আছি। আমার কী কষ্ট পাওয়া উচিত!
আবেগের থেকে নীতিবোধকেই উপরে রাখলেন মিশেল। দুই ব্যক্তিকে হাতুড়ি দিয়ে হত্যা করা জেভিয়েরের জন্য খারাপ লাগেনি মিশেলের। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিশেল বলেন, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে দেখাটা ছিল আমার কাজের একটি অংশ। আমি ছিলাম মৃত্যদণ্ডের পক্ষে। কিছু অপরাধের জন্য এটা সবথেকে কার্যকর শাস্তি হিসেবে আমার মনে হতো। আর যেহেতু আমি ছিলাম তরুণ এবং একগুয়ে তাই আমার কাছে সবকিছুর দু’টি মাত্র রঙ ছিল। সাদা আর নয়তো কালো।
তবে এখন নিজের সেসব অভিজ্ঞতার কারণে বেশ মানসিক পীড়ায় থাকেন বলে জানান মিশেল। ১৮ বছর আগে রিকি ম্যাকজিন নামক এক ব্যক্তির ইনজেকশন দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে দেখেছলেন মিশেল। সেই অভিজ্ঞতা এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় থাকে। রিকের মায়ের কাঁচের ঘর (যে ঘরের ভেতর অপরাধীকে ইনজেকশন দিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়) থেকে রিকের দিকে শেষবার তাকিয়ে থাকার সেই দৃশ্য এখনও ভুলতে পারেন না মিশেল।
তিনি বলেন, এখন আমি যখন সেই সময়ে লেখা নোটগুলো দেখি তখন বুঝি যে এগুলো আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। খারাপ লাগা যে তখনও কাজ করেনি তা নয়। তখন সেই খারাপ লাগার অনুভূতিকে দাবিয়ে রাখতাম। নিজের কঠোরতাই আমাকে সেসময় ধরে রাখে আর এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। তবে এখন আর তেমন শক্ত মনে হয় আমি নেই।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিক থেকে টেক্সাস শীর্ষে আছে। শুধু ২০০০ সালেই এখানে ৪০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় এখানে। হান্টসবিল নামক একটি ভিক্টোরিয়ান ভবনে একটি কাঁচ ঘেরা কক্ষে সুই-সিরিঞ্জের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় এই রাজ্যে। সূত্র: একুশে টেলিভিশন