‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ: সুপ্রিমকোর্টের ২০০৯ সালের নির্দেশনার প্রয়োগ ও কার্যকারিতা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ

‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না’

 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না বলে এক গবেষণায় প্রকাশ পায়। গবেষণা প্রকাশকালে বলা হয় ৮৭ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালের সুপ্রিম কোর্টের দিক-নির্দেশনা জানেন না। কর্মক্ষেত্রে এই হার ৬৪ দশমিক ৫ শতাংশ। মূলত নির্দেশনার বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্র কর্তৃপক্ষের অসচেতনতা ও না মানার কারণে এই অবস্থা। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি হলে তার প্রতিকার পান না ভুক্তভোগিরা। যৌন হয়রানি বন্ধ বা প্রতিকারে করণীয় কি, তা নিয়ে সচেতনতাও কম।

একশনএইড বাংলাদেশ ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ: সুপ্রিমকোর্টের ২০০৯ সালের নির্দেশনার প্রয়োগ ও কার্যকারিতা’ নামের উক্ত গবেষণা পরিচালনা করে। সোমবার ঢাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে গবেষণাটি প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি।

সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের আলোকে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রের ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থা, পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান, সংবাদ মাধ্যমের ২০ জন ব্যক্তির উপরও গবেষণাটি করা হয়। এদের মধ্যে ৬৪ দশমিক ৫ শতাংশ সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। ১৪ শতাংশ নির্দেশনাটি সম্পর্কে জানলেও তাদের এ বিষয়ে কোন পরিষ্কার ধারণা নেই।

অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা নারীনেত্রী খুশি কবির, একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালক ড. আবুল হোসেন প্রমুখ।

আবুল হোসেন বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা পুরোপুরি মানা গেলে কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্যাতন নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে। সরকার এ বিষয়ে কাজ করছে। মানুষ কিংবা পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজের ব্যাপকতা হয়ত কম।

অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা বলেন, আমাদের দেশের বাস্তবতা হলো একজন হয়রানি বা নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। কর্মক্ষেত্রে একই অবস্থা। এই পরিস্থিতি সমাধানে হাইকোর্টেও ২০০৯ সালের নির্দেশণা একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। হয়রানি বা নির্যাতনকারীকে আইনের আওতায় এনে বড় অংকের জরিমানা করলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

খুশি কবির বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনাটা মানা খুবই দরকার। এটি মানা হলে আমাদের দেশে নির্যাতনের মাত্রা কমে যেত। তবে বাস্তবতা হলো স্বীকৃত বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন নির্যাতন হলে তার বিচার হয় না। ছাত্রীদের নির্যাতন সহ্য করতে হয়।

ফারাহ কবীর বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে হাইকোর্টের নির্দেশনা মানে সেটি আইন। তবে সেই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। ফলে নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিকার বা প্রতিরোধ হচ্ছে না। যেটির ভয়াবহতা আমরা বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি। তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বাজেট বাড়ানোর বিষয় জোর দেন।

গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের আগে একই অনুষ্ঠানে নাসরীন স্মৃতিপদক ২০১৮ প্রদান করে একশনএইড বাংলাদেশ। এবছর যৌন হয়রানী ও নির্যাতনের প্রতিরোধে খুলনা জেলার ভারতী বিশ্বাস, ভিন্ন রূপে পুরুষ’ বিভাগে জামালপুর জেলার বালক চন্দ্র বিশ্বাস, শিশুবিবাহ প্রতিরোধে কুষ্টিয়া জেলার টিপু সুলতান এবং নারীর ক্ষমতায়নে নওগাঁ জেলার ঘোড়া দৌড় খেলোয়ার তাসমিনা খাতুন পদক পেয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেকেই পদক, সম্মাননা পত্র, আর্থিক সম্মাননা পান।