আইনজীবীদের সনদসহ পেশাগত বিষয়ের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন১৮’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামীকাল ১৪ মে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ দিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন, দেশের জেলা সদরের সকল দেওয়ানি আদালত প্রাঙ্গণ এবং বাজিতপুরসহ দেশের ১২ উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ানি আদালত অঙ্গনে স্থাপিত কেন্দ্রে এই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এই নির্বাচনেও মূলত দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অনুসারী আইনজীবীরা সাদা-নীল প্যানেলে বিভক্ত। বিএনপি – জামায়াত সমর্থিত ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ কর্তৃক মনোনীত নীল প্যানেল এবং আওয়ামীলীগ সমর্থিত ও সম্মিলিত আইনজীবী পরিষদের মনোনীত সাদা প্যানেল।
নির্বাচনকে ঘিরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বার চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতিতে চলছে নির্বাচনী আমেজ। উভয় প্যানেলের অনুসারী আইনজীবীরা প্রার্থীদের পক্ষে সর্বশেষ দিনের মতো প্রচারণায় চট্টগ্রাম বারে আইনজীবীদের সাথে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করছেন।
অপরদিকে সাদা প্যানেলের সমর্থনে সমিতির ১ নাম্বার মিলনায়তন হতে শুরু হয়ে ডিসি ভবনের সামনে হয়ে লাল বিল্ডিংস্ত পুরোনো মিলনায়তনে শেষ হয়।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তথ্য মতে, বার কাউন্সিল মূলত ১৫ সদস্যের কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার-১৯৭২’ অনুসারে প্রতি তিন বছরে একবার বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে ১৪ জন সদস্য নির্বাচিত হয়ে বার কাউন্সিল পরিচালনার দায়িত্ব পান। তবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
এ কারণে চেয়ারম্যানের পদ ব্যতীত বাকি ১৪টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে আইনজীবীদের ভোটে সাধারণ আসনে সাতজন এবং আঞ্চলিকভাবে গ্রুপ আসনে সাতজন আইনজীবী সদস্য নির্বাচিত হন।
আঞ্চলিকভাবে সাতটি গ্রুপ আসনের মধ্যে যেসব আইনজীবী সমিতিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে হয়েছে, সেগুলো হলো—গ্রুপ এ-তে ঢাকা জেলার সব আইনজীবী সমিতি, গ্রুপ বি-তে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর জেলার আইনজীবী সমিতি, গ্রুপ সি-তে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার আইনজীবী সমিতি, গ্রুপ ডি-তে কুমিল্লা জেলা ও সিলেট জেলা অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি, গ্রুপ ই-তে খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি, গ্রুপ এফ-এর মধ্যে রাজশাহী, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি এবং গ্রুপ জি-তে রয়েছে দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার আইনজীবী সমিতি।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে যারা আছেন
সাধারণ আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাতজন প্রার্থী হলেন— বার কাউন্সিলের বর্তমান কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুয়ায়ুন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান, আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও বার কাউন্সিলের ফাইন্যান্স কিমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, বার কাউন্সিলের বর্তমান কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম (জেড আই) খান পান্না, অ্যাডভোকেট পরিমল চন্দ্র গুহ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল।
পাশাপাশি গ্রুপ আসনের সাত প্রার্থী হলেন, গ্রুপ এ: বার কাউন্সিলের বর্তমান কমিটির নির্বাচিত সদস্য ও লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, (গ্রুপ- বি) মো.কবির উদ্দিন ভূঁইয়া, (গ্রুপ- সি)ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, (গ্রুপ- ডি) এ এফ মো. রুহুল আনাম চৌধুরী, (গ্রুপ- ই) পারভেজ আলম খান, (গ্রুপ- এফ) মো. ইয়াহিয়া এবং (গ্রুপ- জি) রেজাউল করিম মন্টু।
বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে যারা আছেন
সাধারণ আসনের সাত প্রার্থী হলেন— সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, অ্যাডভোকেট মো. বোরহান উদ্দিন, অ্যাডভোকেট হেলালউদ্দিন মোল্লা, অ্যাডভোকেট মো. আব্বাস উদ্দিন ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আসিফা আশরাফী পাপিয়া।
ভোটকেন্দ্রিক আপত্তি নিষ্পত্তিতে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল
নির্বাচনকে ঘিরে আইনজীবী প্রার্থী বা ভোটারদের মধ্যে কোনও আপত্তি দেখা দিলে সে বিষয়ে শুনানির জন্য বিধি অনুসারে তিন সদস্যের একটি ট্রাইব্যুনালও গঠিত হয়েছে। এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হলেন বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম। অন্য দুই সদস্য হলেন— বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মো. ওজি উল্ল্যাহ। এছাড়া নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
চট্টগ্রাম থেকে মো: রায়হান ওয়াজেদ চৌধুরী