রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ও স্বজন পরিবহনের মালিককে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে বিটিআরসি’র আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ১৭ মে দিন ঠিক করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
আজ রোববার (১৩ মে) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আবেদনটি শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন।
আদালতে বিটিআরসি’র পক্ষে ছিলেন এ বি এম বায়েজীদ। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মুনীরুজ্জামান। রাজীবের পরিবারের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
পরে রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেননি। এ বিষয়ে ১৭ মে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়েছেন।
গত ৮ মে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের মালিককে নির্দেশ দেন। এর মধ্যে ২৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ একমাসের মধ্যে দিতে বলা হয় দুই বাস কর্তৃপক্ষকে।
কিন্তু বিআরটিসি ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ১০ মে আপিল আবেদন করেন।
আবেদনের পর ব্যারিস্টার মুনীরুজ্জামান জানিয়েছিলেন, কার কতটুকু দায় সেটা পরিমাপ কিংবা তদন্ত না করে ক্ষতিপূরণের আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর এ ধরনের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে হয়। এছাড়া বিআরটিসি সরকারের টাকায় চলে। তারা কীভাবে ক্ষতিপূরণ দেবে? এসব কারণে হাইকোর্টের আদেশের বিআরটিসির অংশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। যেখানে একমাসের মধ্যে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ ছিল।
এর আগে হাইকোর্টের আদেশের পর আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, রাজীবের খালা জাহানারা পারভীন ও রাজীবের গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদের ছেলে কাস্টমস কর্মকর্তা ওমর ফারুকের নামে সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় একটি যৌথ হিসাব খোলার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই হিসাবে একমাসের মধ্যে দুই বাস কর্তৃপক্ষ ২৫ লাখ করে মোট ৫০ লাখ টাকা জমা দেবেন। টাকা জমা দেওয়ার পর আগামী ২৫ জুনের মধ্যে আদালতকে দুই কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করবেন।
২৫ জুনএ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। ওইদিন বাকি ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশ আসতে পারে বলেও জানান ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে হাত কাটা পড়ে রাজীবের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
হাইকোর্ট এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুল জারিসহ রাজীবের চিকিৎসার খরচ দুই বাস মালিক বিআরটিসি এবং স্বজন পরিবহনকে বহনের নির্দেশ দেন। রুলে তাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক কোটি টাকা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকর করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইন সংশোধন বা নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
এ রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত ১৬ এপ্রিল দিনগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজীব।
এরপর ৬ মে বিষয়টি আদালতকে জানান আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। এরপর আদালত অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে রাজীবের দুই ভাইয়ের জন্য ক্ষতিপূরণের জন্য এ আদেশ দেন।