মাদকসেবী, মাদকের ডিলার, সাপ্লাইয়ার ও স্মাগলারদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলেছেন, যারা মাদকসেবন করেন তারা ছেড়ে দিন, মাদক বহনকারীরা বহন বন্ধ করুন, যারা ডিলার ও স্মাগলার তারা মাদক সরবরাহে সাবধান হোন। সারাদেশে মাদক ও মাদক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে-কাউকে বাদ দিয়ে নয়। সামগ্রিকভাবে কাজ করবে র্যাব।
আজ সোমবার (১৪ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘গত ১৪ বছরে ৬৮ হাজার ৪৯৮ জন মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এই সময়ে ১ হাজার ৭শ ৪ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি পৃথক তিন স্থানে মাদকের বিরুদ্ধে র্যাবকে বিশেষ অভিযান পরিচালনার কথা বলেছেন। গত ৩ মে র্যাবের ‘রাইজিং ডে’তে প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সে অনুযায়ী পরদিন (৪ মে) থেকে অদ্যাবধি ১ হাজার ৪১৫ জনকে আটকের পর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়েছে। আর ৩০ লাখের বেশি জরিমানা করেছে র্যাব। ৩৮১ জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।’
‘আমরা দেশব্যাপী মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেব। আইনে যা যা কভার করে তা-ই করা হবে। যেখানে মামলা দরকার, সেখানে মামলা করা হবে। মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত আমরা অভিযান বলবৎ রাখব।’
তিনি বলেন, ‘যারা নিয়মিত ড্রাগ গ্রহণ করেন, তারা ড্রাগ নেয়া ছেড়ে দেবেন; যারা খুচরা বিক্রি করেন তারা ছেড়ে দেবে; যে সমস্ত লোকজন ডিলারে বিক্রি ও খুচরাদের সরবরাহ করেন তারা ছেড়ে দেবেন; স্মাগলাররা যারা দেশের বাইরে থেকে মাদক নিয়ে আসেন তারা বন্ধ করবেন। খুচরা, ডিলার, স্মাগলার যার কাছে যা (যে পরিমাণ) মাদক মজুত আছে, তাদের পরামর্শ দিচ্ছি-তা র্যাব ক্যাম্পের বাইরে ফেলে যাবেন, ভালো হবে।’
র্যাব ডিজি বলেন, ‘সারাদেশে মাদক বিরোধী অভিযানে জেলা প্রশাসকদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অনুরোধ করছি। যে সমস্ত দেশপ্রেমিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছেন-আমরা চাইব এই মাদকের আগ্রাসন থেকে নিস্তার পেতে সবাই মিলে কাজ করে যাব।’
বিচারিক কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে র্যাব ডিজি বলেন, ‘আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, জঙ্গি ও মাদক আর দশটা অপরাধের মতো স্বাভাবিক অপরাধ নয়। আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আইনজীবী, প্রসিকিউটর, পুটস্টাফদের-যারা মাদকের ব্যবসা করে ডিলার-স্মাগলার, তারা যেন আইনের ফাঁক-ফোকরের অপব্যবহারের সুযোগ না পায়।’
‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘সুরক্ষা বিভাগ’ পুরাতন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনকে হালনাগাদ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব আরও কঠোর মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের ব্যবস্থা করা হবে, যাতে করে আমরা দ্রুত তা প্রয়োগ করতে পারি।’
‘মাদকদ্রব্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ট্রান্সপোর্টের পাশাপাশি, সরকারি বেসরকারি যানবাহনও ব্যবহার হচ্ছে। এর চালকরা কখন, কোথায় সরকারি বেসরকারি যানবাহনগুলো ব্যবহার করছেন-তা গাড়ীর মালিক ও ব্যবহারকারীদের খেয়াল রাখতে অনুরোধ করছি।’
মাদককে ‘জাতীয় সমস্যা’ উল্লেখ করে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমরা সমস্ত শিক্ষক, ছাত্র, রাজনীতিবীদ, ধর্মীয় নেতা, অভিভাবক, কমিউনিটি নেতা, জনপ্রতিনিধি, ইমাম, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, আর্টিস্ট, পারফরমার, এনজিও প্রতিষ্ঠান, সোশ্যাল মিডিয়া টুইটার, ব্লগ একটিস্ট, ব্যাংকার, ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের আমরা সহযোগিতা চাই, যাতে করে আমরা এর শিকড়-নিকড় সমূলে মূলোৎপাটন করতে পারি।’
‘সর্বশেষ ইলেক্ট্রনিকস, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ার সহযোগিতা চাই। আপনারা লেখেন, দেখান; আমরা সেখানেই যাব, অভিযান চালাব। র্যাব সদরের ফেইসবুক, রিপোর্ট টু র্যাব, ১৪টি ব্যাটালিয়নের ফেইসবুক পেইজে যে কেউ মাদক সম্পর্কে তথ্য দিতে ও যোগাযোগ করতে পারবেন। ইতোপূর্বে বড় বড় কাজের ক্ষেত্রে যে জাতীয় ঐক্য ছিল-তা এক্ষেত্রে হলেও বড় কোনো বাধা হবে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব ডিজি বলেন, ‘মাদক ও মাদক ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, আমরা সেটি নিয়ে কাজ করব।’
মাদকের চাহিদা কমাতে র্যাবের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দু’টো জায়গায় কাজ করতে হবে-ডিমান্ড ও সাপ্লাই বন্ধ করা। সেবনকারী ও বিক্রেতারা মাদক ছেড়ে দেবেন। পুনর্বাসনকারী প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।’
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অনেকে মাদক ব্যবসায় জড়িত, তাদের ব্যাপারে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে র্যাব-জানতে জাইলে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘র্যাবের কোনো সদস্য মাদকের সাথে জড়িত নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য যদি মাদকের সাথে জড়িত থাকেন, সতর্ক হোন! মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অভিযান চলবে। কাউকে বাদ দিয়ে নয়, সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধেও নয়-সামগ্রিকভাবে আমাদের অভিযান চলবে।