নির্বাচন অনুষ্ঠানের তিন দিন পর এসে আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের দাবি করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
অন্যদিকে, বার কাউন্সিল নির্বাচনে ভয়াবহ পরাজয়ের গ্লানি থেকে বাঁচতে আমাদের প্রতিপক্ষ অনাহুতভাবে একটি ধূম্রজাল তৈরি করতে অসত্য ভিত্তিহীন কথা বলছে, দাবি আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও বার কাউন্সিলের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান শ ম রেজাউল করিমের।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ মে) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
তবে এরপরপরই একইস্থানে আরেকটি সংবাদ সম্মেলন ডেকে আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও বার কাউন্সিলের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান শ ম রেজাউল করিম বলেন, বার কাউন্সিল নির্বাচনে ভয়াবহ পরাজয়ের গ্লানি থেকে বাঁচতে আমাদের প্রতিপক্ষ অনাহুতভাবে একটি ধূম্রজাল তৈরি করতে অসত্য ভিত্তিহীন কথা বলছে। নির্বাচনে কোনও অনিয়ম হয়নি।
গত ১৪ মে সারাদেশে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের অনানুষ্ঠানিক ফলাফলে সরকার সমর্থক সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ১৪টি আসনের মধ্যে ১২টি আসনে জয়লাভ করে। বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা দু’টি আসনে জয়ী হন।
সারাদেশের সব কেন্দ্রের রেজাল্ট শিট আসার পর কেন্দ্রীয়ভাবে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের বর্তমান সদস্য ৯০৯২ জন। বার কাউন্সিল নির্বাচনে সুপ্রিম কোর্ট বারে ভোটার করা হয়েছে মাত্র ৮৫৩ জনকে। বিগত নির্বাচনে শত শত আইনজীবী এ কেন্দ্রে ভোট দিলেও এবারের নির্বাচনে তাদের অনুমতি বা অনুরোধ ছাড়াই ভোটার তালিকা জেলা বারের ভোট কেন্দ্রে স্থানান্তর করে। এ কারণে এ ভোট কেন্দ্রে তারা ভোট দিতে পারেননি। এটা একটা নজিরবিহীন ঘটনা। তাদের ভোট ঢাকা বারসহ বিভিন্ন নিম্ন আদালতের ভোট কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে।‘এ সম্পর্কে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে সু্প্রিম কোর্ট বারের পক্ষ থেকে ১০ মে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি চিঠি দিলেও তিনি কোনও ব্যবস্থা নেননি। ফলে সুপ্রিম কোর্ট বারের হাজার হাজার সদস্য বার কাউন্সিল নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে বঞ্চিত হয়েছেন। এমনকি নির্বাচনের দিনও ৮৮ জনকে ভোট কেন্দ্র পরিবর্তন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
খোকনের এমন বক্তব্যের জবাবে শ মরেজাউল করিম বলেন, কাউন্সিলের একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে, একাধিক বারে ভোট দেওয়ার প্রবণতা রোধ করতে কেবল একটা বারে ভোট দিতে পারবে। সেজন্য সকল বারে এবং পত্রিকায় নোটিশ দিয়ে বলা হয়েছে কোন বারে ভোট দেবেন অপশন দেন। অপশন না দিলে মূল বারে তিনি ভোট দেবেন। সে সিদ্ধান্তের আলোকে যারা অপশন দিয়েছেন তারা অপশনের বারে রয়েছেন। যারা অপশন দেননি তারা তাদের মূল বারে ভোটার হিসেবে এসেছেন। এ ক্ষেত্রে আইনের কোনও ব্যত্যয় ঘটেনি এবং বার কাউন্সিলের এটা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত, যে কাউন্সিল সভায় সদস্য হিসেবে মাহবুব উদ্দিন খোকনও ছিলেন।
খোকন তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, জাতীয় পরিচপত্র/পাসপোর্ট অথবা সংশ্লিষ্ট বারের পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভোট দেওয়ার বিধান আছে। বিশেষ করে ঢাকা বারে কোনও ধরনের পরিচয়পত্র না দেখিয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তারা ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। যার ফলে প্রকৃত আইনজীবীরা ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এবং অন্যদিকে আইনজীবী নন এমন অনেকে ভোট দিয়েছেন।
এ অভিযোগের জবাবে শ ম রেজাউল করিম বলেন, এটা সর্বৈব অসত্য। কারণ প্রিজাইডিং অফিসার ছিলেন জুডিশিয়াল অফিসাররা। বিচারকদের বিরুদ্ধে এ জাতীয় অভিযোগ আনা দুঃখজনক, দুর্ভাগ্যজনক। সব কিছুকে রাজনৈতিকীকরণ কোনওভাবে যুক্তিসঙ্গত নয়।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিধান থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনের দিন প্রত্যেক প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টকে রেজাল্ট শিট দেওয়া হয়নি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেআইনি বটে। ১৪ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং নির্বাচন বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। অবিলম্বে দুর্নীতি তদন্ত করে দায়ী ও জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। এই নজিরবিহীন দুর্নীতির জন্য বার কাউন্সিল নির্বাচনের নির্বাচন কমিশনার ও অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ দাবি করছি।
জবাবে শ ম রেজাউল করিম বলেন, কোনও অনিয়ম হয়নি। বিভিন্ন বার থেকে রেজাল্ট এসে ঢাকায় গণনা হওয়ার আগে প্রেস কনফারেন্স করার মধ্য দিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তারা কি অগ্রিমই জানতে পেরেছেন তারা হেরে যাবেনই। না হলে রেজাল্ট হওয়ার পরে প্রতিকারের জন্য ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। সেখানে তাদের কোনও কথা থাকলে বলতে পারতো।
‘বেসরকারিভাবে পরাজয়ের দায় এড়ানোর জন্য অনাহুতভাবে বার কাউন্সিলের একটি স্বচ্ছ নির্বাচন যেখানে বিচারকরা প্রিজাইডিং অফিসার, তাদের প্রশ্নবিদ্ধ করার একটি প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের কোনও ত্রুটি হয়নি। আইনে কোনও ব্যত্যয় হয়নি। কোনও অনিয়ম হয়নি। দুর্নীতি হয়নি। এ জাতীয় বক্তব্য রাখা বাঞ্ছনীয় নয়।’