শুধু প্রেম নয়, বিয়েরও ফাঁদ পাতা ভুবনে! বিয়ে করে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু এ বার সেই প্রতারণার পাল্লায় পড়েছেন খোদ এক আইনজীবী! আদালতে দাঁড়িয়ে যে মামলার সওয়ালও করলেন ওই নারী নিজেই। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার
পুলিশের অভিযোগ, একের পর এক নারীকে বিয়ে করে তাঁদের টাকাপয়সা নিয়ে চম্পট দেওয়াই ছিল এই দুই বন্ধুর ‘পেশা’। ওই দু’জন ঠিক কতগুলো করে বিয়ে করেছে, তা অবশ্য এখনও পরিষ্কার নয়। মূল অভিযুক্ত সৌরভের বিরুদ্ধে বুধবার (১৬ মে) শিয়ালদহ আদালতে যিনি সওয়াল করলেন, সেই মহিলা আইনজীবী নিজেও ওই যুবকের প্রতারণার শিকার বলে দাবি করেছেন। সৌরভ নিজেকে একটি টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রের মালিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে ওই নারী আইনজীবীর আস্থা অর্জন করেছিল। তার পরে বিয়েও করেছিল তাঁকে। অভিযোগ, বিয়ের পরেই সৌরভ নগদ ও গয়না মিলিয়ে প্রায় ২০ লক্ষের জিনিস নিয়ে গায়েব হয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, সঞ্জীব নিজের পরিচয় দিত কলকাতার এক চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থার ম্যানেজার হিসেবে।
প্রতারিত আইনজীবী এ দিন বলেন, ‘‘ফেসবুকে বছর দুই আগে সঞ্জীবের সঙ্গে আমার আলাপ। ওর মাধ্যমেই পরিচয় সৌরভের সঙ্গে।’’ তিনি জানান, সৌরভ ও সঞ্জীব তাঁকে বলেছিল, যুবভারতীতে তারা একটি সঙ্গীতানুষ্ঠান করতে চায়, যেখানে মুম্বইয়ের অনেক নামী শিল্পীকে আনা হবে। তরুণী আইনজীবীকে দিয়ে আইনি চুক্তিপত্রও তৈরি করায় তারা। আদালতে ওই আইনজীবী বলেন, ‘‘এক-একটি চুক্তিপত্রের জন্য যেখানে শ’দেড়েক টাকা নেওয়া হয়, সেখানে চুক্তিপত্র-পিছু সৌরভ আমাকে পাঁচ হাজার টাকা করে দিত। এ ভাবেই ও আমার বিশ্বাস অর্জন করে। নজর কাড়তে এক সময়ে দু’জন দেহরক্ষী ও দামি গাড়ি নিয়ে আমার বাড়ির নীচে দাঁড়িয়ে থাকত।’’ ওই মহিলা জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগেই সৌরভের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তার পরে সৌরভ ব্যক্তিগত প্রয়োজনের নাম করে তাঁর থেকে নগদ ও গয়না মিলিয়ে ২০ লক্ষের জিনিস নিয়ে পালায়। ওই মহিলা আইনজীবীর কথায়, ‘‘কী ভাবে যে ওকে বিশ্বাস করেছিলাম, জানি না। পরে জানতে পারি, প্রতারণার ব্যবসায় সঞ্জীব আদতে সৌরভের সহকারী। সে-ই ফেসবুক মারফত বা অন্য ভাবে মহিলাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত এবং সৌরভের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিত।’’
একা ওই মহিলা নন। তালিকাটি দীর্ঘ। এক মহিলা জানান, বাড়ির বাস্তু ঠিক করার নাম করে সৌরভ তাঁর থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা হাতিয়েছিল। সিনেমা ও মডেলিংয়ে সুযোগ দেওয়ার নাম করেও বহু মহিলার থেকে প্রচুর টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই দু’জনের বিরুদ্ধে।
কী করে ধরা পড়ল এরা?
পুলিশ জানিয়েছে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত সৌরভ ও সঞ্জীব গঙ্গাবক্ষে একটি হোটেলের দু’টি ঘরে ছিল। এক মাস থাকার পরে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা বকেয়া রেখে হঠাৎই গায়েব হয়ে যায় তারা। ঘরের টিভিও খুলে নিয়ে যায়। ওই হোটেল কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতেই গত রবিবার সঞ্জীব ও সৌরভকে ধরে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, সৌরভ ও সঞ্জীব মডেলিংয়ে সুযোগ দেওয়ার নাম করে একাধিক তরুণীকে ওই হোটেলে ‘ইন্টারভিউ’ নিতে ডাকত। সেই টোপ দিয়েই সৌরভ সেখানে এক মহিলাকে বিয়ে করে। আর এক জনকে বিয়ে করে সঞ্জীব। তারা ধরা পড়ার পরেই জানা যায় গোটা বিষয়টি।