কারাগার থেকে আসামি আদালতে হাজির না করেই মামলার বিচারের পথ সুগম হচ্ছে। এ ছাড়া সাক্ষীরাও সুযোগ পাবেন দেশ বা বিদেশের যে কোনো স্থান থেকে সাক্ষ্য দেওয়ার। থাকবে না নিরাপত্তা ঝুঁকি। বাঁচবে সময় ও অর্থ। এর ফলে কমবে পাহাড়সম মামলার জট। এ ধরনের বিধান রেখে সাক্ষ্য ও বিচারিক কার্যক্রম (তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার) আইনের খসড়া প্রণয়ন করেছে আইন কমিশন। এ খসড়া আইনে রূপান্তরিত হলে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা আসামিদের আদালতে হাজির করার প্রয়োজন পড়বে না। কারাগার থেকেই অডিও ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তারা আদালতে হাজিরা দিতে পারবেন। এমনকি অভিযুক্ত ব্যক্তি কারাগারে থেকে আইনজীবীর সঙ্গে গোপন পরামর্শ ও আদালতে গৃহীত সাক্ষ্য প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাবেন।
এ প্রসঙ্গে আইন কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা জেলা জজ ফওজুল আজিম গণমাধ্যমকে বলেন, এ আইন প্রণীত হলে চাঞ্চল্যকর অনেক মামলার দুর্ধর্ষ ও দাগী আসামির পাশাপাশি জঙ্গিদের বিভিন্ন আদালতে হাজির না করেই মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন করা যাবে। তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় সাক্ষী গড় হাজিরার কারণে মামলার বিচার নিষ্পত্তিতে বিলম্ব ঘটে। এ আইন প্রণীত হলে দ্রুত নিষ্পত্তি হবে মামলা। তবে প্রয়োজন কারাগারসহ সংশ্লিষ্ট সকল স্থানে অডিও-ভিডিও প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা।
বিচার কার্যক্রমে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি পর্যায়ে আলোচনা চলে আসছে। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচার কার্যক্রমে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের ব্যবহারের জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কৌঁসুলিরা। দুদকের যুক্তি ছিলো, যেহেতু কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে হাজির করা হচ্ছে না সে কারণে তার অনুপস্থিতিতে মামলার বিচার কাজ পরিচালনার জন্য ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্য নেয়া হোক। অবশ্য এর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তখন থেকেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি আরো বেশি করে আলোচনায় স্থান পায়। প্রসঙ্গত ফৌজদারি কার্যবিধিতে আসামির উপস্থিতিতে মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালনার বিধান রাখা হয়েছে। ফলে বর্তমানে আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ নেই।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম. আসাদুজ্জামান বলেন, একজন সাক্ষী যখন সাক্ষ্য দেন তখন সকলের সামনেই তাকে সাক্ষ্য দিতে হয়। সাক্ষ্য দেওয়ার সময় তিনি কারো সাহায্য নিতে পারেন না। কারো শেখানো মতো সাক্ষ্য দেওয়ার তার সুযোগ নেই। এটা করলে তা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। তিনি বলেন, সাক্ষীর সাক্ষ্য সত্য না মিথ্যা আইনজীবীরা নির্ধারণ করেন জেরার মাধ্যমে। ফলে অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সাক্ষী কারো দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন। ফলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা বাস্তবসম্মত নয়। নানা ধরনের সমস্যা তৈরির পাশাপাশি ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে এটা বিরাট অন্তরায় হিসেবে দেখা দিতে পারে।
কমিশনের করা আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আদালত কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে অবশ্যই অডিও এবং ভিডিও সংযোগ থাকতে হবে। এর মাধ্যমে আসামির দৃশ্যমান উপস্থিতি অথবা সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে। তবে মামলার কোনো পক্ষ অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রমে অংশ নিতে চাইলে ১৫ দিন পূর্বে বিচারকের নিকট আবেদন করতে হবে। এজন্য সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখসহ সকল পক্ষের টেলিফোন নম্বর, ই-মেইল আইডি ও তাদের শনাক্তকরণের সুবিধার্থে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করার কথা খসড়ায় বলা হয়েছে। বর্তমানে খসড়াটির ওপর মতামত আহ্বান করা হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, গোপালগঞ্জ ও খাগড়াছড়ির সকল পর্যায়ে প্রশাসনের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছে কমিশন। মতামত যাচাই-বাছাই করে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে কমিশন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।