পাঠকের জিজ্ঞাসা
২০১৩ সালে আমার বিয়ে হয়। আমার পরিবারে সাড়ে তিন বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। আমি একটি ছোট ব্যবসা করি। কিছুদিন আগে আমার বাবা মারা গেলে ওয়ারিশসূত্রে আমি বাবার সম্পত্তি পাই। সে সম্পত্তি পাওয়ার পর আমার স্ত্রী তা বিক্রি করে তার নামে একটি ফ্ল্যাট কিনে দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। এ জন্য আমার স্ত্রী ১০ লাখ টাকা দাবি করে এবং আমাকে নির্যাতন করে। এ ছাড়া আমার প্রতি মাসের পুরো আয় স্ত্রীকে দিয়ে দেওয়ার জন্যও চাপ প্রয়োগ করে। আমি এ বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করলে আমার স্ত্রী আমাকে বিভিন্ন সময় চড়, থাপ্পড়, কিল-ঘুষিসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে। আমি এখন আইনগত কি প্রতিকার পেতে পারি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, চট্টগ্রাম
আইনজীবী : আপনার স্ত্রী যেহেতু আপনাকে জোরপূর্বক ফ্ল্যাট কিনে দেওয়ার জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করে আপনাকে নির্যাতন করছে সে ক্ষেত্রে আপনি আপনার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন। সে মামলা দায়ের পর বিচারক সরাসরি আপনার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা আমলে নিয়ে সমন জারি অথবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার নির্দেশ দিতে পারেন। অন্যথায় আদালত আপনার মামলাটি থানায় তদন্তের জন্য নির্দেশ দিতে পারেন। আর তদন্ত সঠিক এলে আপনার স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিচারক মামলাটি আমলে নেবেন।
আইনে বলা আছে, ‘যৌতুক গ্রহণই নয়, যৌতুক প্রদান ও যৌতুক দাবি করাও শাস্তিমূলক অপরাধ। এ আইন অনুযায়ী যৌতুক দাবি করার কিংবা আদান-প্রদানের এক বছরের মধ্যে ফৌজদারি আদালতে মামলা করতে হবে। এই আইন অনুযায়ী দায়ী ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর ও সর্বনিম্ন এক বছর মেয়াদের কারাদণ্ড বা জরিমানা কিংবা উভয় শাস্তি দেওয়ার বিধান আছে। এ ছাড়া মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হলে উল্টো বাদীর সাজা হতে পারে।
সাধারণত আমরা জানি যৌতুক চাইলে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। তবে কিন্তু স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে যৌতুক চাইলেও স্বামী আদালতে যৌতুকের মামলা করতে পারবেন। তবে স্ত্রী যদি স্বামীর কাছ থেকে দেনমোহরের টাকা ও ভরনপোষণ দাবি করে সে ক্ষেত্রে যৌতুকের মামলা গ্রহণযোগ্য হবে না।
লেখক: শুভ্র সিনহা রায়, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট