অর্পিত সম্পত্তির মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আবেদন বেশি থাকা জেলাগুলোতে একাধিক ট্রাইব্যুনাল করার অনুমতি আছে হাইকোর্টের, কিন্তু সরকার সে পথে হাঁটতে নারাজ। পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠনের পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক।
সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে ভুক্তভোগীদের ভোগান্তি সহজেই কমছে না। আর যারা জেলায় জেলায় ট্রাইব্যুনালের দাবি করছেন তাদের বক্তব্য মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি বিবেচনা করে সরকারের উচিৎ অন্তত যেসব জেলায় এমন আবেদনের সংখ্যা বেশি সেগুলোতে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা। তবে আপাতত জেলা জজ আদালতের ওপরেই ভরসা রেখে এগুতে চাইছে সরকার। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনও পদক্ষেপ আপাতত নেই।
শত্রু সম্পত্তি আইন এবং স্বাধীনতা পরবর্তীকালে অর্পিত সম্পত্তি আইনের দ্বারা ১৯৬৫ সাল থেকে এদেশের লাখ লাখ সংখ্যালঘু পরিবার বংশ পরম্পরায় বঞ্চনা ও দুর্দশার শিকার হয়েছে বলে দাবি করে আসছে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ জাতীয় নাগরিক সমন্বয় সেলভুক্ত সংস্থাগুলো।
অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিল করে ২০০১ সালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন সংসদে পাস হয়। পরবর্তী পর্যায়ে ২০১১, ২০১২ ও ২০১৩ সালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) আইন ও ২০১২ সালে আইনের বিধিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে বর্তমান সরকার অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সরকারের সদিচ্ছার প্রকৃত সুফল এখনো ভুক্তভোগীরা পাননি।
এখনও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালে স্তুপকৃত হাজার হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আইনে আবেদন নিষ্পত্তির সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও এক একটি আবেদন নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর সময় অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে।
অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) এ কে এম বুলবুল আহম্মেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শুধু এই মামলাগুলো দেখবেন এমন বিচারকসহ স্বতন্ত্র ট্রাইব্যুনাল আমরা পাইনি। আইন মন্ত্রণালয় যদি এ বিষয়ে না এগোয় আমাদের জন্য সেটি হতাশার, প্রত্যেক জেলায় এরকম হাজার হাজার মামলা পড়ে আছে। জেলাগুলোতে যেসব বিচারক আছেন তারা অন্য মামলা দেখার পরে এসব মামলা দেখার সময় হয় পান না অথবা তারা এ মামলাগুলোকে গুরুত্ব দেন না। কারণ, এ মামলা নিষ্পত্তির বিষয়টি তাদের এসিআর-এ যুক্ত হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাইকোর্ট বলেছিলেন, এ পরিস্থিতি এড়াতে স্বতন্ত্র ট্রাইব্যুনাল করা যেতে পারে। আইন মন্ত্রণালয় যদি তা না করে ভুক্তভোগীদের ভোগান্তি আরও বাড়াবে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের হিসেব বলছে, ২০১২ সালে এই মামলাগুলো নিষ্পত্তির কাজ শুরু হওয়ার পর ২০১৭ পর্যন্ত ১২ শতাংশ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এই গতিতে চললে আগামী ত্রিশ বছরেও এসব মামলার কোনও সমাধান হবে না। এরপরও স্বতন্ত্র ট্রাইব্যুনাল না করলে বুঝতে হবে মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছা নেই।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হাইকোর্টের দেওয়া যে রায় সেখানে সুস্পষ্ট বলা আছে স্বতন্ত্র ট্রাইব্যুনাল করা যেতে পারে। ভুক্তভোগীরা অর্পিত সম্পত্তি ফিরে পাক প্রধানমন্ত্রীর এই সদিচ্ছা ছিল বলেই আইনটি হয়েছে। আইন আছে কিন্তু, আইনের প্রয়োগ হচ্ছে না। যারা অন্যায়ভাবে এই আইন বহাল রেখেছিল তারাই কিন্তু এখনও লেগে আছে, তারা হাইকোর্টের রায় ও সিদ্ধান্তকে গ্রহণ করতে চাইছে না। আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশ জন্ম হয়েছে কিন্তু আমরা পাকিস্তানি আমলাতন্ত্রের মানসিকতা থেকে সরতে পারিনি, এটাই বাস্তবতা। তারপরও আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, অর্পিত সম্পত্তি আইন অনুযায়ী জজকোর্টগুলোতে বিচার চলবে, আলাদা আদালতের কোনও প্রয়োজন নেই, করারও কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নেই। বাংলা ট্রিবিউন